ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে এক শ্রমিকের পা কেটে নিয়েছে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা। এ অভিযোগে পুলিশ চারজনকে আটক করেছে। তবে মূল অভিযুক্ত উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আবুল বাশারেরকে এখনো আটক করা যায়নি।

গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে উপজেলার রূপসদী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তির নাম কালা মিয়া (৪৫)। একই ঘটনায় টেঁটাবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন তাঁর ছেলে বিপ্লব মিয়া (১৯)। আহত বাবা–ছেলেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কালা মিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবুল বাশারের বিরোধ চলে আসছিল। মাস তিনেক আগে রূপসদী গ্রামের একটি চুরির ঘটনা নিয়ে কালা মিয়ার বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

ওই ঘটনায় কালা মিয়া আবুল বাশারকে প্রধান করে ১৫ থেকে ২০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। সেখান থেকে তাঁদের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত। এরপর কালা মিয়া তাঁর পরিবার নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। সম্প্রতি তাঁরা বাড়ি ফেরেন।

প্রত্যক্ষদর্শী, আহত শ্রমিকের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার বিকেলে আবুল বাশার ও তাঁর লোকজন কালা মিয়া ও তাঁর ছেলে বিপ্লব মিয়াকে নিজ বাড়ি থেকে রূপসদী গ্রামের কান্দাপাড়া এলাকায় নিয়ে যান। সেখানে রাস্তার ফেলে কালা ও তাঁর ছেলেকে মারধর করে আবুল বাশার ও তাঁর লোকজন। একপর্যায়ে ঊরুতে টেঁটাবিদ্ধ করে কালা মিয়ার ডান পা হাঁটুর নিচ পর্যন্ত কেটে নিয়ে যায়। আর তাঁর ছেলে বিপ্লবকে ডান হাতের কনুইয়ের নিচে দুটি টেঁটাবিদ্ধ করা হয়। পরে বিপ্লবের দুই পায়ের রগ কাটে হামলাকারীরা।

ওই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার কর বলেন, ‘আমি ঢাকায় অবস্থান করতেছি। কালা মিয়ার পা আমি কেটেছি, এই অভিযোগ সঠিক না। যতটুকু শুনতে পেরেছি, সে আমাদের গ্রামের এক বাড়িতে চুরি করতে গিয়েছিল। ওই বাড়ির লোকজন ও এলাকাবাসী ধরে তাঁকে পিটুনি দিয়েছে। তবে পরবর্তীকালে কী হয়েছে, আমি জানি না।’

কালা মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমারে বাড়ি থেকে বাশার ও তার বাহিনীর লোকজন ডাইক্যা নিয়া চল (টেঁটা) বিন্দাইয়া দাও দিয়া কুপাইয়া ডাইন (পা) হাঁটুর উপর থেকে নিচ পর্যন্ত কাইট্যা লইয়া গেছে। হেরা নাকি পাওডা (পা) ফুগাইয়া (শুকিয়ে) ফেরত দিব। আমার পাও (পা) কাটার লগে জড়িত আবুল বাশার, ধন মিয়া, মনির মেম্বার, আনার হোসেন, আমাদুল, আলীসহ আরও কয়েকজন।’

এটা মধ্যযুগীয় বর্বরতা উল্লেখ করে বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এ ঘটনায় গত রাত থেকে গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সন্দেহভাজন চারজনকে আটক করা হয়েছে। কালা মিয়ার পরিবারকে মামলা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের বক্তব্য নিতে ঢাকায় একজন এসআইকে পাঠানো হয়েছে।’

কালা মিয়ার খণ্ডিত পা এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।

এদিকে গতকাল শনিবার রাতে বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসান ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক আল আমিন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আবুল বাশারকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

জিআরএস/পাবলিক ভয়েস