 
    
সুলতান মাহমুদ বিন সিরাজ
মানবজীবনের এমন কোন দিক নেই,যা সম্পর্কে ইসলাম সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা প্রদান করেনি। এতে মানুষের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এমনকি আন্তর্জাতিক বিষয়সমূহের বিধিবিধান স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ইসলাম আল্লাহ তা’আলার মনোনিত একমাত্র দীন-একটি পূর্নাঙ্গ ও পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত এ ব্যবস্থার আলোকে একজন মুসলমানকে জীবন যাপন করতে হয়। ইসলামে রয়েছে সুষ্ঠুসমাজ,রাষ্ট্র ও অর্থব্যবস্থা। রয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা।
মানব চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন, ন্যায়নীতি ও সুবিচার ভিত্তিক শান্তি-শৃংখলাপূর্ণ গতিশীল সুন্দর সমাজ গঠন ও সংরক্ষণে ইসলামের কোন বিকল্প নেই, হতেও পারে না। আর এ কথাও দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, ইসলামই কেবলমাত্র আল্লাহ কর্তৃক প্রবর্তিত এবং মনোনীত জীবনব্যবস্থা। যেমন আল্লাহ ছুবহানাহু ওতায়ালা ইরশাদ করেন, “আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত একমাত্র জীবনব্যবস্থা ইসলাম।” (আলে ইমরান : আয়াত ১৯)
ইসলাম কোনো নির্দিষ্ট গোত্র বা বংশের জন্যে আসেনি,বরং এটা সর্বজনীন এবং সর্বকালের জন্য প্রযোজ্য। কেবল ইসলামই পারে বিশ্বের সকল জাতি,বর্ণ,ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষকে এ ভ্রাতৃত্ববোধে আবদ্ধ করতে।
ব্যক্তিগত জীবনে ইসলাম :
ব্যক্তিগত জীবনে প্রত্যেক মানুষের উচিত সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা’আলাকে স্মরণ করা,আল্লাহকে ভয় করা এবং আল্লাহর বিধি মোতাবেক জীবনযাপন করা।
আল্লাহ পাক বলেন, “হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাঁকে যেভাবে ভয় করা উচিত এবং মুসলমান না হয়ে মৃত্যবরণ করো না।” (আলে-ইমরান : আয়াত ১০২)
মানুষ যেমন তার ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামের অনুসরণ করবে,তেমনি অন্য মানুষকে ইসলাম অনুসরণ করতে উদ্বুদ্ধ করবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, “যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎ কর্ম করে এবং বলে, আমি একজন আজ্ঞাবহ, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?” (ফুসিলাত : আয়াত : ৩৩)
পারিবারিক জীবনে ইসলাম :
মানবজীবনের প্রাথমিক ইউনিট হলো পরিবার। এ পরিবার থেকেই মানুষ তার জীবন চলার পথের সকল শিক্ষা পেয়ে থাকে। ইসলামে পুরুষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পরিবারের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা। এ জন্যে কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে, “অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।” (আল-জুমু’আ : আয়াত ১০)
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যেনো সুসম্পর্ক বজায় থাকে এবং তাদের মধ্যে যেনো কলহ বিবাদের সৃষ্টি না হয়, এ জন্যে ইসলামে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মানুষ যেনো নিরাপদে জীবনযাপন করতে পারে এ জন্যে ইসলামে হত্যাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আল্লাহ বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু।” (আন-নিসা : আয়াত ২৯)
মানুষ যেনো সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে সমাজে বসবাস করতে পারে, এ জন্যে ইসলামে অশ্লীলতাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ব্যভিচারকে নিষিদ্ধ করে ইসলামে ঘোষণা হল, “আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।” (আল-ইসরা : আয়াত ৩২)
রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলাম :
রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা রয়েছে। এ নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল যেহেতু একমাত্র আল্লাহ তা’আলার, সুতরাং হুকুমও একমাত্র আল্লাহ তা’আলার চলবে। মানুষের মধ্যে বিচার ফয়সালাও আল্লাহ তা’আলার বিধি মোতাবেক করতে হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদানুযায়ী ফায়সালা করে না,তারাই কাফের।” (আল-মায়িদা : আয়াত ৪৪)
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইসলাম :
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইসলাম সম্পদের সুষম বন্টনের নিশ্চয়তা প্রদান করে। এ প্রসঙ্গে ইসলামের ঘোষণা হল, “যাতে ধনৈশ্বর্য্য কেবল তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যেই পুঞ্জীভূত না হয়।” (আল-হাশর : আয়াত ৭) ইসলাম সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থার পরিবর্তে যাকাত ভিত্তিক অর্থব্যবস্থা চালু করেছে। পবিত্র কুরআনের অনেক জায়গায় যাকাত আদায় সম্পর্কে গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। কুরআনে যেখানেই নামাজের তাগিদ দেয়া হয়েছে, তারপরই যাকাতের কথা বলা হয়েছে।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আর নামায কায়েম কর, যাকাত দান কর এবং নামাযে অবনত হও তাদের সাথে, যারা অবনত হয়।” (আল-বাক্বারা : আয়াত ৪৩) “তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা কর এবং যাকাত দাও।” (আল-বাক্বারা : আয়াত ১১০)
ইসলামে যাকাত ভিত্তিক অর্থব্যবস্থা চালু থাকায় ধনীদের সম্পদ বন্টনের মাধ্যমে গরিবের দুঃখ-দুর্দশা দূর করে তাকে সচ্ছল করে তোলে। এতে যাকাত দাতারও সম্পদ বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন, “আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যে তোমরা যে যাকাত দান কর, প্রকৃতপক্ষে তা যাকাত দাতারই সম্পদ বৃদ্ধি করে।” (রুম : আয়াত ৩৯)
ইসলাম কেবল পরলৌকিক জীবনে নয়, বরং ইহলৌকিক জীবনেও যে বিধান দিয়েছে তাকে আমরা পরিপূর্ণ ও সর্বজনীন ধর্ম বলতে পারি।