“মঙ্গল শোভাযাত্রা” হাজার বছরের ঐতিহ্য বলে একটি কথা খুব করে প্রচলিত আছে। এটি বাঙালির প্রাণের উৎসব, ঐতিহ্যের উৎসব এসব বলে প্রচার-প্রচারণারও যেন কমতি নেই কোনো। এই শোভাযাত্রা নিয়ে বঙালি জাতিকে সম্পূর্ণরুপে দ্বিধাবিভক্ত করে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। মঙ্গল শোভাযাত্রার বিশ্বাসের ভিত্তি নিয়েও অনেকের রয়েছে আপত্তি। হিন্দুয়ানী বিশ্বাস ও মূর্তি-পুজার আদলে মুখোশ নিয়ে শোভাযাত্রা করা একটি সাম্প্রদায়িক ভূমিকা বলেও মন্তব্য রয়েছে দেশের অনেক বাঙালির। তাছাড়া এ শোভাযাত্রায় নারীদের প্রতি হয়রানীর অভিযোগও রয়েছে অনেকের।
হাজার বছরের ঐতিহ্য বলা এ শোভাযাত্রার বয়স মাত্র ৩০ বছর। বাংলাদেশে এ শোভাযাত্রার শুরু ১৯৮৯ সালের দিকে। বলা হয়, সামরিক স্বৈরশাসনের হতাশার দিনগুলোতে একদল তরুণেরা এটা শুরু করেছিল। তারপর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এই শোভাযাত্রা বের হয়।
এই তরুণ তরুণীরা দাবি করে থাকেন, অমঙ্গলকে দূর করার জন্য এ শোভাযাত্রা। তারা কিছু বিষয়কে বাঙালির ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবেও প্রমাণ করতে চান, বিভিন্ন প্রাণি তথা হিন্দু ধর্মের লক্ষির প্রতীক পেঁচা ও হিন্দুদের দেবতাখ্যাত গরুর প্রতিকৃতি ও মুখোশ নিয়ে তারা শোভাযাত্রা করে থাকেন। ইতোমধ্যে এটি ইউনেসকো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। স্বীকৃতি দেয়ার সময় ইউনেসকো যেসব কারণের উল্লেখ করেছিল তার মধ্যে ছিল- এই শোভাযাত্রা অশুভকে দূর করা, সত্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রতীক। এই শোভাযাত্রার মাধ্যমে বাঙালির ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, জাতিগত সব ধরনের বৈশিষ্ট্য এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে হস্তান্তরিত হয় বলেও তারা মনে করেন।
এ বছর ১৪২৬ বাংলা নববর্ষেও এ শোভাযাত্রা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। পহেলা বৈশাখে এ শোভাযাত্রা হবে ঢাকায়। এ বছরের মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে- ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে’। আয়োজকরা বলছেন, এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার পুরোভাগে থাকবে মহিষ, পাখি ও ছানা, হাতি, মাছ, বক, জাল ও জেলে, ট্যাপা পুতুল, মা ও শিশু এবং গরুর (হিন্দুদের দেবতা) আটটি শিল্পকাঠামো। এ ছাড়াও রয়েছে পেইন্টিং, মাটির তৈরি সরা, মুখোশ, রাজা-রানির মুখোশ, সূর্য, ভট, লকেট ইত্যাদি।
শোভাযাত্রার লক্ষে প্রশাসনিকভাবেও নেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিরাপত্তা প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, মঙ্গল শোভাযাত্রা চারুকলা থেকে চিরাচরিত রুটেই যাবে। পুরো পথে সিসিটিভি ক্যামেরা ও পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে। পথিমধ্যে কেউ মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পারবে না। কারণ চতুর্দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে মানবশিল্ড গঠন করা হবে। গতবারের মতো এবারও মুখোশ ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। প্রতিবারের মতো ভুভুজেলা নিষিদ্ধ থাকবে। যদি কেউ ভুভুজেলা বাজিয়ে নারীদের উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করে তাহলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আমরা মানুষকে নিরাপদে রাখতে রমনা পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় কেন্দ্রীয় রাস্তা বন্ধ করে রাখব।
তবে এ শোভাযাত্রার বিপক্ষে পৃথক পৃথক বিবৃতি দিয়েছেন দেশের প্রথম সারীর উলামায়ে কেরামগণ। তারা এ শোভাযাত্রাকে ইসলাম ও মুসলমানদের ধর্মীয় সংস্কৃতির বিপক্ষে একটি বানানো সংস্কৃতি বলে অভিযোগ করেন।
হেফাজতে ইসলামের আমীর ও দেশের আলেম সমাজ তথা ধর্মীয় জনগোষ্ঠির কাছে প্রধান ব্যাক্তি আল্লামা আহমদ শফীর বিবৃতি:
মঙ্গল শোভাযাত্রা ইসলাম সমর্থন করে না: আল্লামা শাহ আহমদ শফী
হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরীর বিবৃতি :
মঙ্গল শোভাযাত্রা হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি, যা মুসলমানের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে : আল্লামা বাবুনগরী
দেশের শ্রদ্ধাভাজন আলেম ও ইসলামের ফিকহী মাসয়ালার মুরুব্বী মাও. আ. মালেকের বিবৃতি :
বিশিষ্ট কবি ও একবিংশ শতাব্দীতে ফররুখের প্রতিচ্ছবি মুসা আল হাফিজের মতামত :
বাংলা নববর্ষ, মনুবাদ ও সাংস্কৃতিক লড়াই
এইচআরআর/পাবলিক ভয়েস