হুজুর। মানে অন্যায় জগতের সঙ্গে যাদের কোনো পরিচিতি নেই। যারা সত্যের আলো বিলান সমাজসংসারে। পথভোলা মানুষকে সঠিক পথের দিশা দিয়ে থাকেন হুজুররা। সাধারণ মানুষ বিপদে পড়লেই হুজুরদের কাছে দোয়ার জন্য চলে যায়। হুজুরদের প্রতি আমপাবলিকের আস্থা বিশ্বাস ও ভালোবাসার পরিমাণ মাপার মতো যন্ত্র পৃথিবীতে তৈরী হয়নি। কিন্তু বর্তমান সময়ে সেই হুজুররাই অবহেলা ও অমূল্যায়ের পাত্র হতে শুরু করেছেন বরং দিনদিন তা বেড়েই চলছে!
ইদানীং যৌনহয়রানী থেকে শুরু করে অপহরণ এমনকি হত্যার মতো জঘন্য ঘটনাও ঘটছে হুজুরদের হাতে। তবে এমন দু-একটি ঘটনা ঘটলে__মিডিয়ার কল্যাণে মনে হয় ঘটনা এক-দুটি নয়, হাজার হাজার ঘটেছে! হুজুরদের হাতে এক-দুটি অপরাধ সংঘটিত হলে মিডিয়া ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটা প্রচার করার জন্য। অথচ চারপাশে এর থেকেও জঘন্য হাজার ঘটনা দৈনিক ঘটেই চলছে, তা নিয়ে যেন মিডিয়ার মাথাব্যথাই নেই!
মূলত মিডিয়ার দোষ দিয়ে লাভ নেই। দৈনিক যে হারে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে— তাতে এসব এখন নরমাল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আলাদা করে চমকিত হওয়ার মতো বিষয়ে এসব নেই। অপরাধ এখন নিত্যদিনের স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজে নতুন কিছু ঘটলে সেটা ফলাও করে প্রচার হয়। ব্যতিক্রমী জিনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহও বেশি। তাই যা সচারাচর ঘটে না, তা ঘটে গেলে সবার দৃষ্টি সেদিকে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।
এই যেমন কক্সবাজারের ইসলামাবাদ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মাদক কারবারীরা রাতভর ইমামকে বেঁধে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছে, তা নিয়ে কিন্তু মিডিয়ার বাড়াবাড়ি বা আগ্রহ কোনোটাই নেই। অথচ মাদকের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার কারণেই চেয়ারম্যানের এই নির্যাতন।
আমরা অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখতে চাই, তাতে সে যে গোত্রের হোক। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো— সুন্নাতী লেবাসের দিকভ্রান্ত কেউ অপরাধ করে বসলে মিডিয়া ও কথিত সুশীল সমাজ ঢালাওভাবে ইসলামী অঙ্গনকে টার্গেট করে বিষোদ্গার করতে থাকে। তবে হুজুরদের অপরাধ নিয়ে মিডিয়ার আগ্রহই প্রমাণ করে— হুজুরদের অপরাধের পরিমাণ বা সংখ্যা অনেক কম। হুজুরদের মাধ্যমে অপরাধ সংঘটিত হওয়া একটি আশ্চার্য বিষয় বলেই মিডিয়ার আগ্রহটা বেশি।
প্রশ্ন হলো— হুজুররা সাম্প্রতিক সময়ে এমনসব অন্যায়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে, যা কল্পনাও করা যায় না। কিন্তু কেন? মূলত এই দেশে অপরাধের বিচার না থাকায় অপরাধ দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে। তনু থেকে শুরু করে নুসরাত, কোনো খুন বা ধর্ষণের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া এর অন্যতম কারণ। অনেকে তো বিচারই পায়নি, আবার যারা বিচার পেয়েছে, তা বিচারের নামে কেবলই প্রহশন, প্রত্যাশিত বিচার হয়নি। বর্তমান সময়ে অপরাধ সংঘটিত হলে সবার মাঝে এমন একটা ধারণা থাকে— এর কেনো বিচার হবে না! কেননা, বাংলাদেশের সংস্কৃতিটা এখন এমনই।
অতি আধুনিক হতে চাওয়া কিছু হুজুররা অপরাধে জড়াচ্ছে। তাদের মাঝে একটা ফ্রিমাইন্ড কাজ করাটাও অপরাধের সূত্রপাত বলে মনে করি। সামাজিকভাবে অপরাধ বেড়ে যাওয়ার প্রভাব এসব হুজুরদেরও গ্রাস করছে। ফলে এরাও এখন মারাত্মক মারাত্মক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তবে অপরাধী যেই হোক, তার পরিচয় শুধুই অপরাধী। সকল অপরাধীর যুগান্তকারী শাস্তি হোক। অপরাধীর সঠিক বিচার হলে নিশ্চয়ই অপরাধ কমে যাবে।