ইসমাঈল আযহার
পাবলিক ভয়েস
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে একটি জাপান। দেশটিতে শিন্তো এবং বুদ্ধ এই দুটো ধর্ম সবচাইতে বেশী চর্চিত হয়। কিন্তু জাপানের সংস্কৃতিতে ইসলাম নিয়ে আলোচনা করতে গেলে কি হবে?
একজন আলোচিত নওমুসলিম নূর আরিসা মারিয়াম। তিনি জাপানের রাজধানী টোকিওতে জন্ম গ্রহণ করেন। মারিয়াম বর্তমানে যুক্তরাজ্য বসবাস করছেন এবং তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন।
শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে মারিয়াম বিদেশী ভাষার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এবং এ জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করার সময় মালয়েশিয়ান স্টাডিজ ও মালয়েশিয়ান ভাষা নিয়ে অধ্যয়ন করেন।
এমনকি এখনো বিদেশী ভাষার প্রতি তার আসক্তি কমেনি এবং লন্ডনে বসে তিনি আরবি এবং ইসলামি বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা নিচ্ছেন।
কীভাবে ইসলাম গ্রহণের এটা মারিয়ামের এক সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে। মারিয়াম জানান,টোকিওতে থাকাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করার সময় আমি মালয়েশিয়ান স্টাডিজ নিয়ে অধ্যয়ন করি এবং আমার পাঠের মধ্যে একটি পাঠ ছিল মুসলিম নারীদের হিজাব সম্পর্কিত।
অধ্যয়ন কারার সময় আমার সাথে অনেক মুসলিমের পরিচয় ঘটে। এভাবেই ধীরে ধীরে আমি ইসলাম ধর্মকে আবিষ্কার করি। আমি বুঝতে পারি যে, মুসলিমরা যেভাবে চিন্তা করে তা আসলে খুব সুন্দর।
এভাবেই নূর আরিসা মারিয়ামের কৌতূহল তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক পাঠ সমূহে অধ্যয়ন করতে আগ্রহী করে তোলে। তিনি এসময় লক্ষ্য করেন যে, মালয়েশিয়ান এবং ইন্দোনেশিয়ানরা ‘মাশা-আল্লাহ’, ‘আলহামদুলিল্লাহ’র মতো কিছু আরবি শব্দ ব্যবহার করে।
তিনি তখন মালয়েশিয়ান এবং ইন্দোনেশিয়ান অভিধানে এসব শব্দের অর্থ খোঁজা শুরু করেন কিন্তু এসব শব্দের কোনো তিনি খুঁজে পাননি। মূলত এসব শব্দের অর্থ খুঁজতে গিয়ে তিনি ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জানতে পারেন।
মুসলিম হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় পরিবার আর বন্ধুদের প্রতিক্রিয়া কি ছিলো এ ব্যাপারে মারিয়াম বলেন, আমি যখন এ বিষয় সম্পর্কে আমার মাকে জানাই তখন তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন। তার কন্যা তাকে না জানিয়ে মুসলিম হয়ে গিয়েছে এ বিষয়টি তিনি একেবারেই মানতে পারছিলেন না।
লোকজন আমাকে নিয়ে কি ভাববে তিনি তা নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন, এমনকি তিনি আমার বিয়ে নিয়েও আশঙ্কা করছিলেন কারণ জাপানে মুসলিমদের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য।
তিনি আমাকে বলেছিলেন তুমি আমার মেয়ে নও এবং কিছু দিনের জন্য আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলেন। কিন্তু আমি জানতাম এমন হওয়া স্বাভাবিক এবং তার নিকট আমার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য আমি প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই।
আমার বন্ধুরা মুসলিম হিসেবে আমার নতুন জীবন নিয়ে অনেক দূর-কল্পনা করতো কিন্তু তারা কখনো আমার সম্মুখে ইসলাম সম্পর্কে কোনো ধরণের বাজে বাক্য বলেনি। আলহামদুলিল্লাহ।
তবে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তার ছোট বোনের নিকট থেকে সমর্থন পেতে থাকেন। নূর আরিসা মারিয়াম বলেন, ‘আমার ছোট বোন আমাকে জানায় যে, সে আমাকে নিয়ে খুব গর্ব বোধ করে।’
এমনকি আরিসা মারিয়ামের ছোট বোন তাকে তার মায়ের নিকট গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। এভাবেই আরিসা মারিয়ামের মা একসময় তার নতুন ধর্ম বিশ্বাসকে গ্রহণ করে নেয়।
আরিসা মারিয়ামের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর তাদের অনেক প্রতিবেশী পরিবার তার সাথে কথা বলতে ভয় পেত। তাদের প্রতিবেশী সকল পরিবার যে একটি ভিন্ন ধর্ম সহজেই গ্রহণ করে নিবে না এমনটি আরিসা মারিয়াম ভালো করেই জানতো। আর এ জন্যই তিনি তার মায়ের নিকট প্রাথমিক অবস্থায় তার ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি উপস্থাপন করেনি।
মুসলিম হওয়ার ভিন্ন জীবনের অনুভূতি জানতে চাইলে মারিয়াম বলেন, প্রথমে আমি নিরাশ হয়ে পড়ি। আমি সে সময় শুধুমাত্র আমার অধ্যয়ন, কর্মক্ষেত্র, বিবাহ এবং একটি নতুন পরিবার শুরু করার বিষয়ে চিন্তা করতাম।
এসব বিষয় ছাড়া আমার জীবনে আর কিছু নেই এবং আমার জীবনের কোনো উদ্দেশ্য নেই ঠিক এমনটিই আমার অনুভবে আসতো।
মাঝে মধ্যে আমি আমার বিশ্বাসের সাথে সংগ্রাম করাটা পরিত্যাগ করতে চাইতাম। কিন্তু বর্তমানে আমি অনুভব করতে শুরু করেছি যে, আমি শুধুমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালার জন্যই বেঁচে আছি এবং পর-কালীন জীবনের জন্য নিজেকে তৈরী করছি।
যদিও এখনো আমি কিছু প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হই, কিন্তু আমি জানি একসময় এসবের অবসান ঘটবে। আমি জানি প্রত্যেক প্রতিবন্ধকতা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে একধরনের পরীক্ষা স্বরূপ।
একজন মুসলিম হিসেবে জাপান এবং যুক্তরাজ্যের জীবনে কী পার্থক্য রয়েছে এ ব্যাপারে জানতে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের তুলনায় জাপানের মুসলিম কমিউনিটি খুবই ছোট। যুক্তরাজ্যে মুসলিমদের সাথে বসবাস করা অনেক সাচ্ছন্দ্যের। এখানে অনেক বেশী মসজিদ এবং হালাল খাবারের রেস্টুরেন্ট রয়েছে।
জাপানে তেমন কোনো মুসলিম নেই এবং ইসলামিক উৎসব আর ইসলামি স্থানের তেমন কোনো অস্তিত্ব নেই। কিন্তু আমি এসব দিক সমূহে ইতিবাচক হিসেবে দেখি। আমি দেখেছি জপানের মুসলিমরা একে অন্যের সাথে দেখা হলে খুবই আন্তরিক ব্যবহার করত যদিও আমরা একে অন্যকে চিনি না।
জাপানে সালাত আদায় করা এবং হালাল খাবার খুঁজে বের করাটা খুবই কষ্টসাধ্য। তথাপি ধীরে ধীরে জাপান বৈচিত্র্য গ্রহণ করে নিচ্ছে এবং মুসলিমদেরকে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশী স্বাগত জানাচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ।
পবিত্র কোরআন, হাদিস, আরবি ভাষা এবং ইসলাম সম্পর্কে আরো বিষদভাবে জানার জন্য আরিসা মারিয়াম যুক্তরাজ্যে এসেছেন এবং ভবিষ্যতে তিনি একজন ইসলামিক স্কলার হতে চান।
ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পূর্বে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে তার অনুভব এবং কৌতূহলের বিষয়ে আলোচনা করতেন। তিনি জানতে চাইতেন তার মত করে কেউ চিন্তা করছে কিনা।
আর ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পরে তিনি ইন্সটাগ্রামে ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য একটি একাউন্ট খুলেছেন এবং এর মাধ্যমে তিনি ইসলাম গ্রহণকারী কিছু নওমুসলিম কে সহায়তা করছেন।
ইন্সটাগ্রামে আরিসার @japanesemuslimahinuk একাউন্টে তার ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানা যাবে আর নিজের ব্যক্তিগত @nurarisamaryam একাউন্টে তিনি যুক্তরাজ্যে তার দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্পর্কে তুলে ধরেন।
আরিসা আশা করেন, জাপান নিজ দেশের মুসলিম সমাজের অস্তিত্বের কথা স্বীকার করে নিবে যারা তার মতো করে হিজাব পরিধান করে, কারণ তিনি জাপানেও এটি পরিধান করেন। সূত্র: মাই ইসালাম ডট কম/আরটিএনএন।
আইএ/পাবলিক ভয়েস