মাদরাসাছাত্রী নুসরাতের হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে “কওমী প্রজন্মের” মানবন্ধন সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিমের পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে অগ্নীদগ্ধ করে পুড়িয়ে হত্যা ও ডেমরায় ছোট্ট শিশু মনিরকে নৃশংসভাবে হত্যা করার প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সচেতন কওমী মাদরাসা ছাত্রদের আয়োজনে “কওমী প্রজন্মের” ব্যানারে মানবন্ধন পালন করা হয়েছে। “অপরাধীর পরিচয় শুধুই অপরাধী” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে মানববন্ধনে এ নৃশংস হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
মানবন্ধন থেকে বক্তারা সোনাগাজীর ও ডেমরার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছেন, এটা কোনোভাবে সভ্য সমাজের পরিচয় হতে পারে না। একজন শিক্ষার্থীকে যৌন নিপিড়ন করে প্রতিবাদ করার কারণে তাকে পুড়িয়ে মারার এ ঘটনা হতবাক করে দেয়ার মতো। মাদরাসার অধ্যক্ষের নামে যে অভিযোগ পাওয়া গেছে তা খতিয়ে দেখাসহ এ ঘটনার সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন তারা। অপরদিকে ডেমরার ঘটনায় মসজিদের ইমাম কর্তৃক শিশু মনিরকে নৃশংসভাবে হত্যার কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন মানববন্ধনকারীরা।
[caption id="" align="aligncenter" width="428"]
বক্তব্য দিচ্ছেন প্রখ্যাত ওয়ায়েজ, লেখক ও সমাজকর্মী মুফতী হাবিবুর রহমান মিছবাহ[/caption]
প্রখ্যাত ওয়ায়েজ, লেখক ও সমাজকর্মী মুফতী হাবিবুর রহমান মিছবাহ'র সভাপতিত্বে ও কলরবের যুগ্মনির্বাহী পরিচালক মুহাম্মাদ বদরুজ্জামানের পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন— কলরবের প্রধান পরিচালক রশিদ আহমাদ ফেরদাউস, মুফতী আবু ইউসুফ মাহমূদী, মুফতী ছাকিবুল ইসলাম কাসেমী, মুফতী আব্দুর রহমান কোব্বাদী, মুফতী রেজাউল করীম আবরার, হাফেজ ক্বারী ইলিয়াস লাহোরী, ক্বারী আব্দুল কাইয়ুম মোল্লা, ক্বারী নুর মোহাম্মাদ, মাওলানা নজির আহমাদ শিবলী প্রমুখ। মানববন্ধনে লিখিত প্রস্তাবলী পাঠ করেন পাবলিক ভয়েস টোয়েন্টিফোর এর নির্বাহী সম্পাদক হাছিব আর রহমান।
[caption id="" align="aligncenter" width="449"] মানববন্ধনে উপস্থিত জনতার একাংশ[/caption]
সরকারের প্রতি মানববন্ধনে গৃহীত প্রস্তাবাবলী :
১. নারীর প্রতি নিপিড়নরোধে তাদের জন্য পর্দাবিধান পালন করার স্বাভাবিক ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।
২. নারীকে ভোগ্যপন্য হিসেবে চিন্তা করার মানসিকতা দুর করতে নারীকে পন্যরূপে উপস্থাপনের বিপক্ষে সার্বিক ব্যবস্থা নিতে হবে
৩. নারীর প্রতি নিপিড়নরোধে ইসলামের মূল্যবোধসহ ধর্মীয় মূল্যবোধ বৃদ্ধির চেষ্টা করতে হবে।
৪. দেশে নারীর প্রতি নিগৃহের বিপক্ষে কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে
৫. ধর্ষণের শাস্তির বিধান মৃত্যুদন্ড করে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে।
৬. ধর্ষণের টেষ্টের নামে “টু ফিঙ্গার টেষ্ট” বন্ধ করার আদালতের আইন বাস্তবায়ন করতে হবে
৭. থানায় মামলা নিতে গড়িমসি করার বিপক্ষে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৮. ধর্ষণ মামলা পরিচালনার জন্য পুলিশ ছাড়াও সরকারীভাবে স্পেশাল বাহিনী তৈরি করতে হবে।
প্রসঙ্গত : নুসরাত জাহান রাফি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিমের পরীক্ষার্থী। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা এর আগে তাকে যৌন নিপীড়ন করে বলে অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগে নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এসময় তাকে কৌশলে একটি বহুতল ভবনে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সেখানে তার গায়ে দাহ্য পদার্থ দিয়ে আগুন দেওয়া হয়।
বুধবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টায় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাত মারা যান। নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনার পর গত ৮ এপ্রিল নুসরাতের বড়ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে সোনাগাজী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ১০।
[caption id="" align="aligncenter" width="474"] বক্তব্য কলরবের প্রধান পরিচালক রশিদ আহমাদ ফেরদাউস[/caption]
আসামিদের মধ্যে পলাতক রয়েছে— সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলম, অধ্যক্ষ সিরাজউদৌলার অন্যতম সহযোগী নূরউদ্দিন, ওই মাদ্রাসার ছাত্র সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন শামীম, জাবেদ হাসান ও আব্দুল কাদের। পিবিআই জানিয়েছে, এই মামলায় থানা পুলিশের গ্রেফতার করা অধ্যক্ষ সিরাজউদৌলাকে সাতদিনের ও ওই মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আবছার এবং নুসরাতের সহপাঠী আরিফুল, নুর, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ও শাহিদুল ইসলাম পাঁচদিন করে রিমান্ড রয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এছাড়া, অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বোনের মেয়ে উম্মে সুলতানা পপি ও জোবায়ের আহম্মেদকে আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড চাইলে আদালত বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) শুনানির জন্য দিন ধার্য করে আসামিদের কারাগারে পাঠান।
ফেনী পিবিআইর পরিদর্শক মো. মোনায়েম মিয়া বলেন, ‘পিবিআই এখনও কাউকে এই মামলায় গ্রেফতার করেনি। তবে শিগগিরই গ্রেফতার করা হবে। আমাদের কয়েকটি টিম কাজ করছে।’ এদিকে, ঢামেক হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তে শেষে নিহত নুসরাত জাহানের মরদেহ নিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা ফেনীর উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকালে দাদির কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন নুসরাত।