ফেনীবাসীর চরিত্র বড়ই অদ্ভুত! যেই লোকটা শ্লীলতাহানীর অপরাধে অভিযুক্ত, তার পক্ষে কিছু মানুষ থাকা অস্বাভাবিক না। কিন্তু এমন চরিত্রহীনের পক্ষে সেজন্য প্রকাশ্যে মিছিল নামাতে হবে?
সিরাজুদ্দৌলা, মানুষ নামের অমানুষটা আজ দেশের মানুষের কাছে ঘৃণিত, আর সমাজের কলংক। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যেখানে কালপ্রিটদেরকে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন সেখানে তারা প্রকাশ্যে তার পক্ষে মিছিল করে কোন সাহসে? সোনাগাজী থানা পুলিশের ভূমিকাও তো ঐ চরিত্রহীনেন পক্ষে। ওসি প্রথমে বলেছিলো, মেয়েটা আত্মহত্যার জন্য নিজ শরীরে আগুন দিতে পারে। আসলে এদের মনুষ্যত্ব লোপ পেয়ে জানোয়ারি চরিত্রের হয়ে গেছে।
আজ সোনাগাজীর ওসিকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ প্রশাসন। যেখানে ডিআইজি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ব্যাপারটা ডিল করছেন, সেখানে ঐ ওসির ভূমিকা ছিল তাঁর মনোভাব পরিপন্থী। কোন স্বার্থের জন্য সে এমন ঝুঁকি নিয়েছে?
মাদ্রাসার ছাদে নিয়ে যারা নুসরতের গায়ে আগুন দিলো, তাদেরকে চিহ্নিত না করে বা পাকড়াও না করে সে সোজা বলে দিলো, আত্মহত্যা করতে গেছিলো সে। অথচ খুনীরা হতভাগ্য মেয়েটির দু-হাত বেঁধেছিলো ওড়না দিয়ে, যাতে আগুন না নিভাতে পারে। ওড়না পুড়তে পুড়তে ছাই হবার পর তাঁর হাতের বাঁধন খুলেছে। মৃতপ্রায় মেয়েটি ঘটনার আদ্যপান্ত বলছে। অথচ সেখানেও সন্দেহ করছে পুলিশ! আসলে ওখানে শিক্ষক কর্মচারী ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবক ,পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সবাই যেন অসুস্থ প্রকৃতির। আসলে এরা ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় আছে। এরা ছাত্রলীগ যুবলীগ আওয়ামী লীগ। তাই ওখানে সুবিচারের আশা করাটা বোকামি হবে।
স্বার্থের জন্য এরা জামায়াতকেও কোলে নিয়ে ঘুরতে পারে। কিছু দিন আগেও তো সিরাজ জামাতের নেতা ছিল। এ ছাড়া আগুন দেয়ায় জড়িতরা নাকি ছাত্রী সংস্থার রাজনীতি করে। এখন এরা দুই গ্রুপ একসাথ হয়ে গেছে, সুতরাং ওখানে ধর্ষকের পক্ষে মিছিল হতে পারে, গায়ে আগুন দিয়ে মারতে চাইলেও সেটা আত্মহত্যার ঘটনায় রূপান্তরিত হতে পারে। কিছুদিন পরে জেলগেটে তারা হয়তো চরিত্রহীন এই অধ্যক্ষের গলায় মালা পড়াবে।
মেয়েটা এখনও মারা যায়নি। যারা যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। দুনিয়ায় যাদের জন্য সে জাহান্নামের ন্যায় অতি কষ্ট ভোগ করতেছে। তাঁরাই কিনা চরিত্রহীন সিরাজের মুক্তির জন্য মিছিল করছে! কত অভাগী এ মেয়েটা!
আমি নিশ্চিত বলতে পারি এখানে 'রাজনীতি' ঢুকে গেছে। আর এতে জড়িত স্থানীয় রাজনৈতিক পান্ডারা। স্থানীয় কাউন্সিলর পালাবে কেন? যারা সময় অসময়ে ঐ অধ্যক্ষের থেকে আর্থিক সুবিধা পেতো। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মুমূর্ষু মেয়েটার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন, আর মেয়েটির শরীরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় যারা জড়িত সকলতে ধরতে নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ আমরা দেখতেছি, তাঁরই দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা অধ্যক্ষের মুক্তির জন্য আন্দোলন করছে। এরা ওখানে কত শক্তিশালী, ভাবা যায়? প্রধানমন্ত্রীকেও তারা চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে!
সোনাগাজী থানার ওসিকে প্রত্যাহারের পর ওখানের যতসব রহস্য আছে, তা উদঘাটিত হবে আশা করা যায়। প্রকাশ্য দিবালোকে মাদ্রাসার অভ্যন্তরে কারা মাদ্রাসার ছাদে উঠে এমন নারকীয় ঘটনা ঘটালো, তা চিহ্নিত করতে সপ্তাহ পেরিয়ে গেল। খুনীরা বাইরের কেউ না। সবাই ভিতরের। ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষক কর্মচারীদের ধরে প্যাদানি দিলে সবই বেরিয়ে আসবে। এখন স্বেচ্ছায় বলছে না, স্থানীয় প্রভাবশালীদের ভয়ে।
এমন ঘটনায় যারা চুপ থাকছে, প্রতিবাদ করছে না, তারা ধর্ষকের সহযোগী ছুপা শয়তান। এটা ফেনীতে নয় ঢাকায়ও আছে। এরা পোষাক দেখে প্রতিবাদ করে। কোন ঘরানার সেটা তালাশ করে। এরা মানবাধিকার রক্ষার জন্য নাকি আন্দোলন করে, অথচ একজন ছাত্রীকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় প্রতিবাদ করে না। এটা মানবাধিকার ও নারী নির্যাতনের আওতায় পড়েনা বুঝি! একটা কারণ অবশ্য দেখতেছি সেটা হলো- এই মেয়েটা মাদ্রাসার ছাত্রী। এবং সে বোরকা পরিহিতা ছিলেন। তারা শরীরের পোষাক দেখে সিদ্ধান্ত নেয়, কোন ভিকটিমের পক্ষে তারা কথা বলবে বা বলবে না! বাংলাদেশটা এখন হিপোটক্রাটদের দখলে। এরা সামান্য স্বার্থ পেয়ে বিবেককে চুলায় ভরতে পারে। স্বার্থ ই বড় কথা। মানবিক মূল্যবোধ ঠুনকো হয়ে গেছে।
এখন দেখার বিষয়, ফেনীবাসী কি তাহলে ধর্ষক -লুচ্চা- বদমাইশদের আখড়ায় পরিণত হতে চলেছে? আর সোনাগাজী কি সোনাগাছিতে?