ওয়াশিংটন-তেলআবিব রাজনৈতিক সম্পর্কে ইসরায়েলি লবির প্রভাব নিয়ে কঠোর বক্তব্য দিয়েছিলেন ইলহান ওমর। যাতে তার উপর চটেছেন ইহুদী স্বার্থ রক্ষাকারী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প।
হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি ইলহান ওমর ও ট্রাম্পের মধ্যে কিছুদিন ধরে এ নিয়ে বাকযুদ্ধ চলছে। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বাস্তবতায় ইলহান ওমরের ইসরাইলবিরোধী বক্তব্য প্রত্যাহার করিয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু এরপরও ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধি ওমরের জন্য বিশেষ কৃতজ্ঞতা। আমি খুবই দুঃখিত_ ভুলে গিয়েছিলাম, তিনি ইসরায়েলের মাধ্যমে প্রভাবিত নন।’
ট্রাম্পের এ বক্তব্যের পর পবিত্র হাদীস থেকে উদ্বৃতি টেনে জবাব দিয়েছেন সোমালি বংশোদ্ভূত এই মুসলিম রাজনীতিক ইলহান ওমর।
আরবি ও ইংরেজিতে লেখা হাদিসটির অর্থ হলো- ‘হে আমার পালনকর্তা! তুমি আমার সম্প্রদায়কে ক্ষমা করো। কারণ তারা জানে না।’
তিনি ট্রাম্পের বিভিন্ন সময়ের বিদ্বেষ-পূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, ট্রাম্প তার পুরো জীবনে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ কথা বলে এসেছেন। ইহুদি, মুসলিম, আদিবাসী, কৃষ্ণাঙ্গ সবাই তার বিদ্বেষের শিকার হয়েছে। আমার কথায় যে অন্য মানুষ আহত হতে পারে, সে শিক্ষা আমি পেয়েছি। কিন্তু আপনি (ট্রাম্প) কবে সে শিক্ষা পাবেন?
এরপর হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর হাদীস দ্বারা জবাব দিলেন ইলহান ওমর। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বর্নণা করেন “আমি যেন রাসুল সা. এর দিকে চেয়ে আছি আর তিনি বর্ণনা দিচ্ছেন এক নবীর; যাকে তার জাতি নির্যাতন করে রক্তাক্ত করে ফেলে। আর তিনি নিজের মুখাবয়ব থেকে রক্ত মুছতে মুছতে বলেন, ‘হে আমার পালনকর্তা! তুমি আমার সম্প্রদায়কে ক্ষমা করো। কারণ তারা জানে না।’ (বুখারি, হাদিস নং: ৩৪৭৭; মুসলিম, হাদিস নং: ১৭৯২)
হাদিসবিশারদরা বলেন, রাসুল সা. যে নবীর বর্ণনা দিয়েছেন, সেই নবী মূলত তিনি নিজেই ছিলেন। তায়েফ অঞ্চলে কাফেরদের নির্মম অত্যাচারে ও পাথরের আঘাতে জর্জরিত হয়ে দীর্ঘ দোয়া করেছিলেন তিনি। দোয়ায় তিনি অত্যাচারীদের জন্য বদদোয়া না করে (অভিশাপ না দিয়ে) উল্টো তাদের কল্যাণ ও সৌভাগ্যের দোয়া করেছিলেন।
ইলহান ওমরের জন্ম সোমালিয়ায়। সেখান থেকে উঠে আসা প্রথম আমেরিকান-মুসলিম আইনপ্রণেতা তিনি। ২০১৬ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত হন।
মূলত ইসরায়েলি লবির প্রভাব নিয়ে সমালোচনা করায় কয়েক সপ্তাহ আগে ইহুদিবাদী সমর্থকদের সমালোচনার মুখে পড়েন ইলহান। তবে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রগতিশীল সদস্যরা ইলহান ওমরের পাশে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন আলেকজান্দ্রিয়া অকাসিও-করতেজ। রক্ষণশীল টিভি ফক্স নিউজ যেভাবে ইলহান ওমরের বিরুদ্ধে আক্রমণ করছে—তার সমালোচনা করে গতকাল শনিবার আলেকজান্দ্রিয়া বলেছেন, তাদের লাগামছাড়া বক্তব্যের কারণেই একজন কংগ্রেস সদস্যকে হত্যার হুমকি দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে ইলহানকে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে একাধিকবার। গতকাল ইলহান ওমরকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে নিউইয়র্কে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির নাম প্যাট্রিক কারলিনিও (৫৫)। তিনি ইলহান ওমরের ওয়াশিংটন অফিসে ফোন করে তাঁকে হত্যার হুমকি দেন। ইলহান ওমরকে তিনি মিসরের নির্যাতিত ইসলামপন্থী সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য বলে দাবি করেন। গুলি করে তাঁর মাথার খুলি উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি।
প্যাট্রিককে গত শুক্রবার এফবিআই গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের সময় তিনি সগর্বে বলেন, ‘আমাদের বাপ-দাদারা বেঁচে থাকলে ইলহান ওমরকে গুলি করে হত্যা করতেন।’
ইলহান ওমরের জন্মস্থান সোমালিয়া। সে দেশ থেকে আসা প্রথম আমেরিকান-মুসলিম আইনপ্রণেতা তিনি। ২০১৬ সালে মিনেসোটার হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভের সদস্য নির্বাচিত হন এই নারী। অভিবাসী ও শরণার্থী ইস্যু নিয়ে কাজ করেন তিনি।
এইচআরআর/পাবলিক ভয়েস
আরও পড়ুন : যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের প্রথম হিজাব পরা পার্লামেন্ট সদস্য