মঈনুদ্দীন খান তানভীর
১. নবীকে মুসলমান বলা যাবে না। কেননা আমরা মুসলমান। নবীরে ও যদি বলেন মুসলমান, তবে আর ফারাক রইল কই? কোরআনের ভাষ্যমতে, কুল্লু মুসলিমুনা ইখওয়াতান (?)। এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে হিসেবে নবী তখন ভাই হয়ে যান। উম্মাহাতুল মুমিনীন হয়ে যান আমাদের ভাবি। অথচ তারা হলেন আমাদের মা। সুতরাং নবীকে মুসলমান বলা যাবে না। বললে ঈমান থাকবে না।
বিষয়গুলো জনসম্মুখে মাহফিলে বলে বেড়াচ্ছে এক বক্তা। কথার ফাঁকে আবার জানাচ্ছে, অজানা জিনিস জেনে যান। ঈমান তাজা হবে। হয়তো এ কথাগুলো আর কখনোই শুনেননি। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ও হাবিবুর রহমান রেজভী হুজুর। কিশোরগঞ্জের হাবিবুর রহমান রেজভী হুজুর। নবীকে কেন মুসলমান বলা যাবে না... যেভাবে নিজের নাম ঠিকানা বলে কয়ে এই অবান্তর যুক্তি পেশ করছে, পরিকল্পিত ভিডিও ধারণ করছে, হতে পারে বিষয়টা ভাইরাল করার চিন্তা তার মাথায় পূর্ব থেকেই ছিল।
বিপদে পড়বে, ভাবেনি। এরকম কতশত বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা গিলাচ্ছে তারা গ্রামগঞ্জের সরলমনা মুসলমানদের! অজানা জিনিস জাইনা যান-বাক্যটির দ্বারা স্পষ্টই প্রতীয়মান হয়, তিনি 'আনকমন ' গবেষণা করেন। আর দশজনের চেয়ে আলাদা জ্ঞান রাখেন। বিষয়টা বুঝাতে তার চেষ্টার কমতি নেই। সেজন্য এ অপরাধকে নিছক 'নবীপ্রেমের অন্ধত্ব' কিংবা 'মুখ ফস্কে বেরিয়ে যাওয়া ভুল' মানতে আমি রাজি নই।
২. কিছুদিন আগে ড. নজরুল ইসলাম বাইশহাজারী নামের আরেক বক্তা কোরআনের আয়াত বানানোর ধৃষ্টতা দেখালো। একেবারে বানানো সব শব্দাবলী। যাকে কোরআনিক শব্দমালা দূরে থাক। সাধারণ অর্থবোধক আরবী শব্দের কাতারে ও ফেলা যায় না। আন্তর্জাতিক ক্বারীদের মতো সুন্দর সুরে পুরো কোরআনের মতো পড়ে যাচ্ছিলেন, আর বলছিলেন- কোরআন কীভাবে পড়তে হয়, এ বুড়ো থেকে শিখ। আমার পড়া শুনে হাফেজরা ও অবাক হয়। হ্যাঁ, হাফেজরা অবাক হয়েছিল বটে। তবে তা সৌন্দর্যের কারণে নয়। বরং কোরআনে অস্তিত্ব নেই এমনসব আয়াত শুনে।
হাজারো জনতার উপস্থিতিতে মিডিয়ার সামনে একের পর এক আয়াত বানিয়ে যাচ্ছে। আবার দম্ভভরে বলছে, কোরআন কীভাবে পড়তে হয়, তা এই বুড়োর কাছে শিখ। ভাবা যায়! দুয়েকটা শব্দ, একটা হাদীস কিংবা আরবী বাক্য হলে নাহয় বলা যেত, অজান্তে মুখ ফসকে বলে ফেলেছে। কিন্তু এভাবে ধারাবাহিকভাবে! সাম্প্রতিক এ দুটো ঘটনা তো মিডিয়ার বদৌলতে ছড়িয়ে পড়েছে। এরকম কতশত সহস্র অপব্যাখ্যা বিকৃতি রয়ে যায় সেই আড়ালেই। মোটেও কি আমরা তার খবর রাখি?
৩. এসব ক্ষেত্রে যে কয়টা কারণ সবিশেষ উল্লেখযোগ্য, তন্মধ্যে- মূর্খতা এবং নিজের জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃতি ও বৈচিত্র প্রকাশের অভিলাস অন্যতম। উত্তরণের পন্থা হিসেবে জানি অনেকে অনেক কথাই বলবেন। দাওরা বা কামিলের সার্টিফিকেট হাজির করার কথা বলবেন। অথচ তাদের অনেকের সার্টিফিকেটে ফাস্টক্লাশ ফাস্ট হবার নজীর বিদ্যমান। কেউবা আবার মধ্যপ্রাচ্যের উদাহরণ দেখিয়ে দাঈদের জন্য সরকারী অনুমোদনের বাধ্যবাধকতার নজীর পেশ করবেন। এদেশে এ প্রথা আমদানি করা আর বিড়ালকে শুটকির পাহারাদার রাখা সমান কথা। বোর্ড তৈরি করে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের অনুমোদনের বিষয়টি ও কেউ কেউ উথাপন করে থাকেন।
স্বজনপ্রীতি ও প্রতিহিংসা পরায়ণতার এ সময়ে এ প্রস্তাবটি ও তেমন বাস্তবানুগ নয়। ক'দিন যেতে না যেতেই হযবরল অবস্থা হবে তাতে।
৪. কী করা যায় তাহলে? আমার মনে হয়, এক্ষেত্রে সবচেয়ে ফলপ্রসূ ও কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে জনসচেতনতা সৃষ্টি। ব্যাপক জনসচেতনতার মাধ্যমেই বন্ধ হতে পারে ভয়ংকর এই প্রবণতা। উম্মাহর রক্ষাকল্পে এক্ষেত্রে মাঠে ময়দানে ভূমিকা রাখা সচেতন ওলামায়ে কেরামের নৈতিক দায়িত্ব।