ইবনে মুসা
২৮ মার্চ বনানীর এফ আর টাওয়ারের চারিদিকে যখন আগুন ছড়িয়ে পড়ে, ভেতরে আটকে পড়া মানুষগুলো যখন বাঁচার তাগিদে দশতলা বিশতলার ওপর থেকে ঝাঁপ দেয়, জানালার গ্লাস ভেঙ্গে নারীপুরুষের বাঁচার করুণ আর্তনাদ চারিদিক হৃদয়বিদারক করে তোলে, ঠিক তখনই জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে তাদের সাহায্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে এক যুবক। সেইদিনের আসল হিরো সেই যুবকই। সেই আসল সুপারম্যান... চলুন! দেখা যাক কে সে!
গত ২৮ মার্চ বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় পাইপবয় নাইম। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আগুন নেভাতে পানির পাইপ নিয়ে চারিদিক ছুটোছুটি করেছিলেন। ঐ সময় উৎসুক জনতার ভিড়ে তাদের কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। উপস্থিতিরা টাওয়ারে আটকে পড়া বিপদগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াবার চেষ্টা না করে সেলফি, ছবি আর ভিডিও নিয়ে ব্যস্ত ছিল!
ঠিক সেই সময় ছোট্ট একটি বালকের অসামান্য একটি কাজ এড়াতে পারেনি সাংবাদিকদের নজর। কাজটি যদিও অতি সাসান্য, কিন্তু স্থান-কাল-পাত্রভেদে সেই অসাধারণ কাজটিই হয়ে ওঠে অসাধারণ। সবাই যখন সেলফীবাজিতে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময় পাইপের ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে পানি যেন না বের হয়, সেজন্য সেখানে পলিথিন পেচিয়ে বসে থাকে ছেলেটি।
কিন্তু আশ্চার্যের বিষয় হলো— ছেলেটি কাজটি ভালো করেছে ঠিক, তার মানে এই নয় যে, সবকিছু উদ্ধার হয়ে গেছে! মিডিয়াসহ সারাদেশে ভাইরাল টপিকে রুপ নেয় পাইপবয়! এক প্রবাসী ব্যক্তি পাঁচ হাজার ডলার পুরষ্কার ঘোষণা করেন ছেলেটির জন্য! ওকে নিয়ে ইউিউবাররাও শুরু করে তাদের ব্যবসার হিসেব-নিকেশ! মানে যে যেভাবে পেরেছে ছেলেটির ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে! শেষ পর্যন্ত এই ইস্যুর কী অবস্থা তা তো সবারই জানা।
কিন্তু আমার বলার উদ্দেশ্য ভিন্ন। পাইপে পলিথিন পেঁচিয়ে বসে থাকা নাইমকে যারা হিরো বানিয়েছে, তাদের কাছে প্রশ্ন— সেদিন যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আটকে পড়াদের সহযোগিতা করেছে, তারা কোথায়? তাদের সামান্য নিউজও এলো না কেন? সবাই কেন ঐ পিচ্চিকে নিয়ে ব্যস্ত ছিল? উদ্ধার কাজে দায়িত্বরত ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তার জীবন এখন মৃত্যুর দুয়ারে। কই তাকে নিয়ে তো ইউিউবারদের দৌড়ঝাঁপ দেখিনি?
চলুন বনানীর ঘটনায় আজ আপনাদের একজন আসল হিরোর গল্প শুনাই—
জসিম উদ্দীন। টগবগে এক যুবক। জীবনের অনেকটা সময় এখনও পড়ে আছে। এই সময় এই বয়সের কোনো ছেলে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে কারও সাহায্যে এগিয়ে আসবে__এমনটা ভাবনারও বাইরে।
২৮ মার্চ বনানীর এফ আর টাওয়ারের চারিদিকে যখন আগুন ছড়িয়ে পড়ে, ভেতরে আটকে পড়া মানুষগুলো যখন বাঁচার তাগিদে দশতলা বিশতলার ওপর থেকে ঝাঁপ দেয়, জানালার গ্লাস ভেঙ্গে নারীপুরুষের বাঁচার করুণ আর্তনাদ চারিদিক হৃদয়বিদারক করে তোলে, ঠিক তখনই জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে তাদের সাহায্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে এক যুবক ও তার বন্ধুরা। সেইদিনের আসল হিরো সেই যুবকই। সে-ই আসল সুপারম্যান। নাম জসিম উদ্দীন।
পাশের বিল্ডিং থেকে রশি ফেলে— নিচ থেকে রশি বেয়ে ওপরে উঠে আটকে পড়াদের নামিয়ে আনে জসিম। আল্লাহর দয়ায় এভাবে অনেক মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে সে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, জসিম সুপারম্যানের মতো রশি বেয়ে দ্রুত ওপরে উঠছে ও আটকে পড়া বিপদগ্রস্তদের নামিয়ে আনছে! তাহনিশনের একটি ভিডিওতে এই সুপারম্যানের সাক্ষাৎকার দেখতে পাই। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি যুবকটির দিকে!
এক বিদেশিকে নামিয়ে আনতে চরম কষ্টের বর্ণনাও দিয়েছে সে; লোকটি অনেক বেশি স্বাস্থবান ছিলেন। তবে তিনি যে বিদেশী তা জানতাম না। দশ তলার ওপর থেকে নেমে ছয়তলা বরাবর এসে আটকে যান লোকটা। নিচ থেকে তাকে সাহায্যের জন্য আবার রশি বেয়ে ওপরে উঠি। কাছাকাছি গেলে ওপর থেকে ঐ বিদেশী লোকটা আমার দিকে তাকালে তার চোখ মুখ ও নাকের পানি এবং ঘামগুলো বৃষ্টির পানির মতো আমার মুখের ওপর পড়ে, কিন্তু আমার একটাই শপথ— কোনো বাঁধাই আমাকে ফেরাতে পারবে না। ওনাকে নামাবোই। নামাতে গিয়ে হাত কেটেছে, পায়ে গ্লাসভাঙ্গা ঢুকেছে, আরও কত কী।
অথচ এই জসিমরা থেকে যায় পর্দার আড়ালে! এদের পাশে মিডিয়া নেই, ক্যামেরা নেই, ইউটুবার নেই। এই দেশে দামী ব্যক্তিদের মূল্যায়ন হবে কবে?
জসিমের কথাগুলো শুনুন
https://www.facebook.com/publicvoice24/videos/2291844054365014/