আহমদ বাবর, বাবুনগর থেকে
বিট্রিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্রদূত আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানী রহ. এর খাস শাগরেদ, বাবুনগর মাদ্রাসার মুহাদ্দিস, শায়খুল হাদীস আল্লামা ইউনুস রহ. এর জানাজা ও দাফন ৩ এপ্রিল রাত অনুমানিক রাত সাড়ে নয়টায় মাদ্রাসা মাঠ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। উনার জানাজায় তাঁর হাজার হাজার ছাত্র, আলেম-ওলামা, ভক্তবৃন্দ ও বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশাজীবি মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
জানাজা পূর্ব সমাবেশে বাবুনগর মাদ্রাসার মুহতামিম, এদেশের ইসলামী অঙ্গনের শীর্ষ মুরুব্বী আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন-"মরহুম আল্লামা ইউনুস রহ. ছিলেন একজন নিভৃতচারী বুযুর্গ ও নিষ্ঠাবান আলেমে দ্বীন। সারাজীবন তাঁকে প্রথম কাতারে দাড়িয়ে জামাতে নামাজ আদায় করতে দেখেছি। নীচের দিকে তাকিয়ে তিনি মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফিরতেন এবং বাড়ি থেকে মাদ্রাসায় আসতেন। কারো গীবত সমালোচনা করতেন না। সঠিক সময়ে এসে মাদ্রাসায় দরস দিতেন। জীবনে কখনো কারো সাথে ঝগড়া করতে দেখেনি। তাঁকে কখনো নামাজে তাকবীরে উলা ফওত হতেও দেখেনি।
আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী আরও বলেন, আমার আব্বা (আল্লামা হারুন বাবুনগরী রহ.- তৎকালীন প্রিন্সিপ্যাল, বাবুনগর মাদ্রাসা) একদিন আমাকে ডেকে বললেন, বলতো দেখি- এই মাদ্রাসার মধ্যের স্তম্ব কে? (টুনি-আঞ্চলিক ভাষায় তিনি বলেছেন) আমি অনেকক্ষণ নিশ্চুপ ছিলাম। আব্বাজী বললেন, আমার মাদ্রাসার মধ্যের স্তম্ভ হলেন মাওলানা ইউনুস। আজ আল্লামা ইউনুস রহ. এর ইন্তেকালের মাধ্যমে আমরা মাদ্রাসার মধ্যস্থ স্তম্ভ হারিয়ে ফেললাম। হারিয়ে ফেললাম একটি সম্পদ।
বাবুনগর মাদ্রাসার প্রধান মুফতী ও অন্যতম মুহাদ্দিস আল্লামা মুফতী মাহমুদ হাসান বলেন, আল্লামা ইউনুস রহ. ছিলেন আমার সরাসরি উস্তাদ। তিনি ছিলেন ইলমে হাদীসের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। বুখারী, মুসলিম অন্যান্য কিতাব যেমন তিনি দরস দিয়েছিলেন এর বাস্তব প্রতিচ্ছবি তাঁর জীবনে দেখেছি। সর্বদা নামাজের প্রথম কাতারে তাঁকে নামাজ পড়তে দেখেছি। নীচের দিকে তাকিয়ে তিনি চলাফেরা করতেন। মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফিরতেন ও মাদ্রাসায় এসে দরস (ক্লাস) করাতেন।
তাঁর কাছে হাদীস পড়েছেন এমন ছাত্রদের সংখ্যা প্রায় দশ হাজার হবে। তিনি বাবুনগর মাদ্রাসায় প্রায় ৬৫ বছর নিরলসভাবে খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন।
ফতেপুর মাদ্রাসার মুহতামিম (প্রিন্সিপাল) আল্লামা মাহমুদুল হাসান ফতেপুরী বলেন, তিনি আত্নীয়তার খাতিরে আমার দাদা হন। তিনি একজন নিভৃতচারী আল্লাহর ওলী ছিলেন। তাঁর ইন্তেকালে জাতি একজন ওলীয়ে কামেল ও আল্লাহর ওলীকে হারাল।
বৃষ্টিস্নাত রাত্রে মাদ্রাসা ময়দানে বিপুলসংখ্যাক আলেম-ওলামা, ছাত্র, মুহিব্বীন, জনসাধারণেরর উপস্থিতে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার ইমামতি করেন বর্ষীয়ান আলেমে দ্বীন ও বাবুনগর মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। পরে মাদ্রাসার কবরস্থানে আল্লামা হারুন বাবুনগরী ও আকাবিরদের পাশে তাকে দাফন করা হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিভৃতচারী এই ওলীয়ে সাধক কে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন।