প্রশ্ন: ২৭ই রজব তথা মেরাজের রাতে নফল ইবাদত করা এবং ওই দিনে রোযা রাখা কি বিদআত? (পাকিস্তান থেকে)
উত্তর: ২৭ই রজবের রজনীই যে মেরাজের রাত এটা নিয়েই তো মুহাদ্দিসীন ও ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তাছাড়া হাদীসের গ্রন্থগুলোতে এই রাতে গুরুত্বের সাথে ইবাদত করার কথা পাওয়া যায় না। এই রাতে বিশেষভাবে ইবাদতের সম্পর্কে যে বর্ণনাগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো দলীলের উপযোগী নয়। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি অন্যান্য রাতের মতো এই রাতেও স্বাভাবিকভাবে ইবাদত করে এতে কোনো সমস্যা নেই। এমনিভাবে এই রাতের পরের দিন রোযা রাখার ব্যাপারেও কোনো সহীহ হাদীস নেই। আর লোকমুখে যে প্রসিদ্ধ আছে—‘এই দিনের রোযা এক হাজার রোযার সমান’, এই কথার কোনো ভিত্তি নেই।
.
দারুল ইফতা দারুল উলূম দেওবন্দ, সাহারানপুর, উত্তর প্রদেশ, ভারত। ফতোয়া নং- ৩৩৪৫১
(লিঙ্ক: http://www.darulifta-deoband.com/…/Innovations--Custo…/33451)
হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) ‘সহীহ বুখারী’র ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ফাতহুল বারীতে’ বলেন, ‘মেরাজ একাধিকবার সংঘটিত হয়েছে। কিছু স্বপ্নে, আর কিছু সশরীরে জাগ্রত অবস্থায়। অসংখ্য সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, কুরআনে বর্ণিত মেরাজ নবুওয়তের পর সশরীরে জাগ্রত অবস্থায় হয়েছে। আর এটাই আহলে সুন্নাত ওয়ালজামাআতের অভিমত।
তবে এ মেরাজটি মদীনায় হিজরতের কতদিন পূর্বে হয়েছে? এ নিয়ে ওলামায়ে কেরামের প্রায় ১০টি মতামত পাওয়া যায়:
১. হিজরতের ৬ মাস পূর্বে।
২. ৮ মাস পূর্বে।
৩. ১১ মাস পূর্বে।
৪. ১২ মাস পূর্বে।
৫. ১৪ মাস পূর্বে।
৬. ১৫ মাস পূর্বে।
৭. ১ বছর ৫ মাস পূর্বে।
৮. ১ বছর ৬ মাস পূর্বে।
৯. হিজরতের ৩ বছর পূর্বে।
১০. ৫ বছর পূর্বে।’
(খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ২৩৭-২৪৩)।
.
দারুল উলূম দেওবন্দের শায়খুল হাদিস হযরতুল উস্তায মুফতী সাঈদ আহমদ পালনপুরী (দা.বা.) বলেছেন, ‘মেরাজের মাস সম্পর্কেও ৫টি অভিমত রয়েছে-
১. রবিউল আওয়াল।
২. রবিউল আখার।
৩. রজব।
৪. রমযান।
৫. শাওয়াল।
আর লোকমুখে প্রসিদ্ধ হলো, মেরাজ হিজরতের ১ বছর পূর্বে ২৭ই রজব সংঘটিত হয়েছে।’
(তুহফাতুল কারী: খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ৩৪৭)।
আবার কেউ কেউ ৩ বছরের এবং দেড় বছরের বর্ণনাকেও প্রাধান্য দিয়েছেন। উপরিউক্ত আলোচনা দ্বারা বুঝা যাচ্ছে কোনো একটি রাতকে নির্দিষ্টভাবে মেরাজের রজনী বলা দুষ্কর। কুরআন-হাদীসে সুস্পষ্টভাবে দিন-তারিখের কথা উল্লেখ না থাকার কারণে আলেমগণ স্ব স্ব গবেষণা অনুযায়ী নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আর যদি ধরেও নিই যে, ২৭ই রজব মেরাজের রাত, তাহলেও তো এই রাতের ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন এবং তাবয়ে তাবেয়ীন থেকে বিশেষ কোনো আমল বর্ণিত নেই। তাই কাউকে শবে মেরাজের শুভেচ্ছা জানানো, মেরাজের রাতে বিশেষ পদ্ধতিতে ইবাদত করা এবং পরের দিন বেশি ছাওয়াবের আশায় রোযা রাখা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত হবে।
উর্দূ ফতোয়াটির ভাষান্তর করেছেন- কবির আহমদ কাসেমি