ভারতে কন্যাভ্রুণ হত্যার সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এতে করে এক জাতীয় বিপর্যয়কারী পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে চলেছে৷ এর প্রধান কারণ গর্ভাবস্থায় ভ্রুণের লিঙ্গ পরীক্ষা৷ যদিও ভ্রুণের লিঙ্গ পরীক্ষা নিষিদ্ধ৷ নারীবাদীদের মতে, এর পেছনে আছে সামাজিক ও আর্থিক কারণ৷
ডয়চে ভেলের থবরে বলা হয়, ভারতে নিয়মিত কন্যাভ্রুণ হত্যা করা হয়৷ কারণ আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষায় যখন জানা যায় গর্ভস্থ সন্তান পুত্র না কন্যা, তখন পরিবারের লোকজন কন্যাভ্রুণ নষ্ট করতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইতস্তত করে না৷
ভারতে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বছরে ১০ লাখ কন্যাভ্রুণ হত্যা করা হয়৷ তার মারাত্মক পরিণতি দেখতে হয় সমাজকে ও দেশকে৷
ইউনিসেফের রিপোর্ট বলছে, কন্যাভ্রুণ হত্যা এখন গণহত্যার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে৷ হরিয়ানা, পাঞ্জাব, দিল্লি, গুজরাট, হিমাচল প্রদেশ এবং ওড়িষা কোথায় নয়? প্রায় সব রাজ্যেই মোটামুটি একই অবস্থা৷
আগামী জনগণনায় বা সেন্সাসে জানা যাবে নারী-পুরুষের সঠিক অনুপাতে কতটা ফারাক৷ বর্তমান অনুপাত প্রতি হাজার পুরুষে ৮০০ বা তার কম নারী৷ ছেলের বিয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।৷ বাড়ছে ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, মেয়ে পাচার৷
এই প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলে কথা বলেছিলো পশ্চিমবঙ্গের মহিলা কমিশনের প্রাক্তন প্রধান সুনন্দা মখোপাধ্যায় বললেন, পুত্রসন্তান পারলৌকিক কাজ, বংশরক্ষা, বৃদ্ধবয়সে দেখাশুনা ইত্যাদি করে থাকে৷ ‘এই বিষয়গুলি আমাদের সমাজের গভীরে প্রোথিত৷ দ্বিতীয় কারণ মেয়ে মানেই নিরাপত্তাহীনতা৷ মেয়ে ছোট হলেও একা বাড়িতে রেখে যাওয়া যায় না৷
স্কুলে পাঠিয়েও শান্তি নেই৷ সেখানেও নিরাপত্তার অভাব৷ বাস ড্রাইভার বা তাঁর সহযোগীর হাত থেকে রেহাই নেই৷ ব্যাড টাচের আশঙ্কা পদে পদে৷ স্কুলের প্রিন্সিপ্যালও এই নিয়ে মাথা ঘামান না৷ এমনকি পরিবারের লোকজনের হাতেও কন্যা সন্তান নিরাপদ নয়৷ কিন্তু এর বিহিত তেমন হয়না৷ হলে কদাচিত হয়,' বলেন তিনি
ডয়চে ভেলের খকরে সেন্টার ফর সোস্যাল রিসার্চের এক পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলা হয়, ভারতে প্রতি ২৫টি কন্যাসন্তানের মধ্যে একজনকে হত্যা করা হয়।
ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ টেস্ট বন্ধ করার জন্য নারী সংগঠনগুলি দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে৷ ভারতীয় সংবিধানের ১৪ এবং ১৫ ধারা অনুসারে কন্যাভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ অবৈধ৷
এই আইন লঙ্ঘনে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার বা চিকিত্সাকর্মীর তিন বছর পর্যন্ত জেল এবং জরিমানা হতে পারে, যদি তাঁরা জন্মের আগেই ভ্রণের লিঙ্গ মা-বাবা বা আত্মীয় অভিভাবকদের আগেভাগেই জানিয়ে দেন৷
তবে গর্ভস্থ ভ্রুণ যদি জটিল ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে গর্ভপাত করা যেতে পারে এবং সেটা করতে হবে গর্ভের ১২ সপ্তাহের মধ্যে৷
আইএ