৫ দফা দাবি আদায়ের জন্য শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে তাদেরকে “রাজাকারের বাচ্চা” বলে সম্বোধন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. ইমামুল হক। এর প্রতিবাদে বুধবার ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলন ঘনিভূত হচ্ছে দেখে বুধবার দিবাগত রাত ২ টায় জরুরীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সাথে সাথে ছাত্র-ছাত্রীদের হলত্যাগ করারও জরুরী নির্দেশনা দেয়া হয়।
এর প্রতিবাদে রাতেই স্টুডেন্টরা নেমে আসে রাস্তায়। রাত আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয় তারা। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের নির্দেশনাকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে তারা মিছিল করতে থাকে।
জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত শিক্ষার্থীদের ৫ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে। পাঁচ দফা হচ্ছে- ছাত্র সংসদ চালু, পরীক্ষা বর্জন করলে ফের পরীক্ষা নেয়ার জন্য কোনো জরিমানা না করা, এক মাসের মধ্যে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড হস্তান্তর করা, বিশ্ববিদ্যালয় বাসের সংখ্যা বাড়ানো এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ওভার ব্রিজ তৈরি করা।
এর আগে শিক্ষার্থীদের ছাড়া মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান উদযাপনের প্রতিবাদে সকালে হলের খাবার বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ওই সময়ও তারা ৫ দফা দাবি পেশ করেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাঝেই স্বাধীনতা দিবসের একটি অনুষ্ঠানে ভিসির বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দুপুরের পর আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ দেয়।
সন্ধ্যায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি না মানা হলে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের আল্টিমেটাম দেয়। শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. ইমামুল হক স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন ক্যাম্পাসে। কিন্ত ফুল দেয়া ছাড়া আর কোনো অনুষ্ঠানে (মধ্যাহ্ন ভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান) শিক্ষার্থীদের রাখা হয়নি। এর প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করলে ২৬ মার্চ দুপুরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির (বিইউডিএস) একটি প্রোগ্রামে ভিসি আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে সম্বোধন করেন।
এ বক্তব্য শিক্ষার্থীদের মাঝে আরও ক্ষোভের সৃষ্টি করলে তারা আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়। পাশাপাশি ভিসির বক্তব্য প্রত্যাহার না করা হলে এবং ৫ দফা দাবি মানা না হলে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের আল্টিমেটাম দেয়া হয়। সেই অনুযায়ী আন্দোলন চলছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম বলেন, সবার মতামতের ভিত্তিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন করছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. ইমামুল হক জানান, বছরজুড়ে শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা অনুষ্ঠানমালা রয়েছে। এমনকি স্বাধীনতা দিবসেও তাদের আলাদা কর্মসূচি রয়েছে। বছরে শুধুমাত্র বিশেষ এসব দিনেই ভাইস চ্যান্সেলরের পক্ষ থেকে শিক্ষক, কর্মকর্তা, বরিশালের বিশিষ্টজন এবং সাংবাদিকদের চা-চক্রের আমন্ত্রণ দেয়া হয়ে থাকে। এখানে ছাত্রদের কখনই রাখা হয় না। হঠাৎই এ বছর এমন করছে তারা। তাদের না রাখা হলে অনুষ্ঠান করতে দেয়া হবে না বলেও জানিয়েছে তারা।
তিনি বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির (বিইউডিএস) অনুষ্ঠানে আমি বলেছি, যারা স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান চায় না, যারা এভাবে কথা বলে তাদের আমি কি বলে আখ্যায়িত করবো? তাদের স্বাধীনতার পক্ষে বলে তো মনে হয় না। তাদের ব্যবহার রাজাকারের মতোই।
ড. ইনামুল বলেন, শিক্ষার্থীদের আমি কিভাবে রাজাকারের বাচ্চা বলি, বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানও তো রয়েছে। আমার কথা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর কারণও ভিন্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার আর সময় রয়েছে দুই মাস। আবার যদি আমাকে সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়, এ ভয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখানোর চেষ্টা চলছে। আমি থাকলে অনেকে বিপদে পরে যেতে পারেন।