মানুষকে সঠিক পথে পথপ্রদর্শনের একটি বড় মাধ্যম হলো বয়ান। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার জীবনে সাহাবাদের বয়ান করতেন। ইসলামের বিধানাবলি তাদের সামনে তুলে ধরতেন। জান্নাতের প্রতি আগ্রহ প্রদান করতেন এবং জাহান্নাম সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করতেন।
একজন মানুষের অন্তর যদি আখেরাতের ভয়ে প্রকম্পিত থাকে, দুনিয়ার প্রতি তার আগ্রহ ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। গুনাহের পরিণামের কথা ভেবে আখেরাতের শাস্তির ভয়ে তার শরীর কেঁপে উঠবে। একজন মুসাফির যেমন রাস্তায় রাত্রিযাপন করলে সেটাকে নিজের বাসস্থান মনে করে না; কোনোমতে রাত পার করে আবার নিজের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পথ চলে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসাফিরের মতো পৃথিবীতে জীবনযাপন করার কথা বলেছেন।
ওয়াজের মূল মাকসাদ কী? প্রথমত মানুষের আকিদা বিশুদ্ধ করতে হবে। কারণ, বিশুদ্ধ আকিদার অনুসারী না হলে আমল গৃহিত হবে না। ইসলামের আহকাম বা অন্য কোনো বিষয় নিয়ে কেউ অপব্যাখ্যা করলে, ব্যঙ্গ করলে সেগুলোও আকিদার আলোচনায় আসবে। কারণ, বিশুদ্ধ আকিদার অর্থ হলো, সকল ফিরাকে বাতিলার অসারতা মানুষের কাছে তুলে ধরা। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হলো, মানুষকে জান্নাতের পথে পথপ্রদর্শন এবং জাহান্নামের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করা।
এবার বর্তমানের ওয়াজ নিয়ে একটু বলি। ভিন্ন মাসলাকের কাউকে নিয়ে কথা বলার ইচ্ছে আমার নেই। বছর তিনেক আগে তাহেরী সাবকে নিয়ে আমরা হাসাহাসি করতাম। কিন্তু এতো দ্রুত তাহেরী সাবের চেয়ে মারাত্মক বক্তা আমাদের মাসলাকে জন্মগ্রহণ করবে? সেটা কেউ ভাবতে পারিনি।
মানুষ আগে ওয়াজ শুনতো হেদায়াত লাভের আশায়। এখন ওয়াজ শুনে বিনোদিত হওয়ার জন্য। শ্রোতাদের আনন্দ দিতে বক্তারা মিথ্যার পসরা সাজান। ইলিয়াছুর রহমান জিহাদি মুহতারাম তো শ্রোতাদের বিনোদিত করতে মিথ্যার পসরা সাজান। কয়েকদিন আগে সৌদি আরব থেকে একজন বয়ানের একটি লিংক দিয়ে বললেন, আপনাদের আলেমরা মিথ্যা বলতে কি আল্লাহকে ভয় করেন না? ওনি নাকি বদরের সবচেয়ে বড় মসজিদে ইমামতি করেছেন! ইমামতি করতেই পারেন! কিন্তু যখন শুনলাম মসজিদের সভাপতি ইমাম সাহেব জ্যামে আটকে থাকার কারণে ১২ মিনিট বিলম্ভ হওয়ার পর তাকে ইমামতি করার কথা বলেন! আচ্ছা! বদরের কেন্দ্রীয় মসজিদে ওনি কমিটির সভাপতি পেলেন কোথায়? এছাড়া বদরের রাস্তায় জ্যামের কথাও বানানো! এছাড়া আরবীরা আজমির পেছনে নামাজ পড়ে না, রাফয়ে ইদাঈন না করার কারণে উনাকে খারাপ মনে করেছে, এগুলো সত্য তথ্য না। ওয়াজে মনে হয় এ ধরণের গল্প করা অহেতুক এবং ফালতু কাজ! ওয়াজের মঞ্চে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, মাস্তানী স্টাইলে কথা বলা, গোপালগঞ্জের ছেলে বলে হুমকি দেওয়া, প্রধানমন্ত্রী আমার শ্বাশুড়ি বলে চাপাবাজি করা ভদ্রতার পরিচয় হতে পারে না।
উনার আরও বিষয় শরিয়তের দৃষ্টিতে খুবই আপত্তিকর। গান গেয়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, বিড়ি খাওয়ার পদ্ধতি দেখানো, বিভিন্ন অশ্লীল গনের শ্লোক গেয়ে শুনানো খুবই আপত্তিকর বিষয়। কুরআন, সুন্নাহর ওয়াজের সাথে এগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই। আবদুল খালিক শরিয়তপুরি মুহতারামও কোনো অংশে জিহাদী সাহেবের চেয়ে কম নয়।
ওয়াজের নামে উনারা যে তামাশা শুর করেছেন, সেটা অবশ্যই এখন বন্ধ করতে হবে। উনারা আশা করি বাস্তবতা অনুধাবন করবেন। ইউটিউবে উনাদের যে কোনো ওয়াজের কমেন্ট দেখলে সচেতন মানুষ উনাদের কোন দৃষ্টিতে দেখে আশা করি সেটা অনুধাবন করতে পারবেন। কুরআন, সুন্নাহকে পাশ কাটিয়ে অহেতুক গল্প, বিনোদনমূলক কথা বলার কী দরকার? সামান্য পড়াশুনা করলে জনসাধারণের সামনে কথা বলার মতো পূঁজি সংগ্রহিত হয়ে যায়।
বাংলাদেশের জনসাধারণের কাছে দীনের সঠিক বার্তা পৌঁছুনোর একটি বড় মাধ্যম হলো ওয়াজ মাহফিল। আমাদের জিহাদী সাহেবরা সে অঙ্গনকে অনেকটা বিনোদন বানিয়ে ফেলেছেন। বাংলাদেশের অনেক বড় বড় আলেমদের সাথে তারা সম্পর্ক রাখেন। তাদের মাধ্যমে বিষয়টি বুঝানো উচিৎ। কারণ, অনেক তরুণ ছেলেরা ইতিমধ্যে বাজার গরম করার জন্য তাদের অনুসরণ করা শুরু করে দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা আমাদেও সকলকে সুমতি দান করুন।