
পাবলিক ভয়েস: নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নে রাতে ঘুমন্ত ভূমিহীন আদিবাসী ও মুসলিম পরিবারের ৪০টি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনায় ছয় আদিবাসী আহত হয়েছেন। জমি দখলের অভিযোগে এই অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ কেরেছেন।
গত রোববার রাত ১২টার দিকে উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের বস্তাবর গ্রামের কাগজকুটা গ্রামের পুকুর পাড়ে এই অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। আদিবাসীদের অভিযোগ লীজ গ্রহীতা স্থানীয় আ.লীগ নেতা মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি ধামইরহাট থানা পুলিশ।
সরজমিনে দেখা গেছে, এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিকী নামে এক ব্যক্তি উপজেলা ভূমি অফিস থেকে লীজ নেন। এরপর হাত বদলে বস্তাবর গ্রামের মোশারফ হোসেন নামে এক প্রভাবশালী আ.লীগ নেতা প্রায় চার বছর আগে কাগজকুটা পুকুরসহ প্রায় তিন বিঘা পুকুরসহ জমি কিনেছেন বলে দাবি করেন।
এদিকে ওই সম্পত্তি সরকারি খাস দাবি করে প্রায় চার মাস আগে এলাকার ভূমিহীন ৪০টি আদিবাসী ও মুসলিম পরিবার টিনের ছাউনি এবং বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘর নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন।
এ ঘটনায় একাধিক মামলাও রয়েছে। গত রোববার মধ্য রাতে ঘুমন্ত ভূমিহীন মানুষদের উপর মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে লাঠিসোটা নিয়ে শতাধিক দুর্বৃত্ত হামলা চালায়। এ সময় ঘরবাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে ধান, চাউলসহ ঘরে প্রায় সব কিছু পুড়ে যায়।
অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনাটি জানতে পেরে বিজিবি-১৪ পত্নীতলার ব্যাটেলিয়নের আওতায় স্থানীয় বস্তাবর বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা দ্রুত ঘটনা স্থলে যান। বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে হামলাকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
এ নিয়ে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করলে এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তবে এই আতংকে অনেক আদিবাসী পরিবার এলাকা ছেড়েছেন। অনেকে ভিটা মাটি হারিয়ে খোলা আকাশের নীচে দিন পার করছেন।
নির্যাতনের শিকার মৃত মোজাফ্ফর রহমানের বিধবা স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, সন্ত্রাসীরা হাতে ধারালো অস্ত্র আর হাতে পেট্রোল নিয়ে হামলা চালায়। তারা মারপিট করে বাড়ি-ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় তারা থালা-বাসন, চাউল, নগদ টাকাসহ যা পেয়েছে তাই লুট করে নিয়েছে।
বিধবা শান্তি পাহান জানান, গভীর রাতে হামলার ঘটনায় আমরা ভূমিহীনরা খুবই আতঙ্কিত। চিৎকার ও আগুনের শিখা দেখতে পেরে স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা দ্রুত এগিয়ে আসেন বলে তারা জীবনে বেঁচে গেছেন।
এসময় আদিবাসীসহ ভূমিহীন বাসকারীরা বলেন, গত এক বছর থেকে আমরা এই পুকুর পাড়ের সরকারি জায়গায় বসবাস করে আসছি। কিন্তু প্রভাবশালী স্থানীয় আ.লীগ নেতা মোশারফ হোসেন ওই জায়গাটি নিজের বলে দাবী করে আমাদের জায়গাটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসছিলেন।
গত রোববার গভীর রাতে তারা শতাধিক জন লোক নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালিয়ে বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয় সবকিছু। বর্তমানে আমরা খোলা আকাশের নিচে অনাহারে আছি।
এসময় তারা চেয়ারম্যান ফজলুর রহমানের নামে অভিযোগ করে বলেন, চেয়ারম্যান আপোষের নামে আমাদের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা চেয়েছিলেন। টাকা না দিলে তিনি আমাদের পক্ষ হয়ে কাজ করবে না বলে জানিয়েছেন।
এদিকে ওই জমির দাবিদার মোশারফ হোসেন মিস্টার বলেন, ওই জমিটি আমাদের দলিলকৃত। দীর্ঘদিন জমিটি আমাদের দখলে ছিল। কিন্তু হটাৎ করে কতিপয় লোকজন অবৈধভাবে দখলের জন্য ছোট ছোট ঘর নির্মাণ করে।
বিষয়টি নিয়ে চলতি মাসের ১০ তারিখে ধামইরহাট থানায় একটি নিজ দখলীয় জায়গায় অবৈধ অনুপ্রবেশের একটি মামলা করা হয়। বিবাদমান ওই জমিতে নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। আদালতের আদেশ অমান্য করে তারা বসতবাড়ি নির্মাণ করেছে।
তবে ওইসব বাড়িঘরে তিনি বা তার কোন লোকজন আগুন দেয়নি এবং এর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্তা নেই।
আলমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বলেন, বহু বছর থেকে ওই জায়গাটা মোশারফ হোসেন মিস্টারের দখলে ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ভূমিহীনরা সেখানে বাড়ি করে বসবাস শুরু করে।
আপোষের জন্য উভয় পক্ষকে নিয়ে বসা হয়েছিল। কিন্তু কোনো পক্ষই ছাড় দিতে চায় না। এ কারণে সেখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার তো আমার না। আর আপোষের নামে ভূমিহীনদের কাছে টাকা দাবী করার বিষয়টি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
বিজিবি-১৪ পত্নীতলার ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লে: কর্নেল খিজির খান জানান, ঘটনাটি দেখতে পেয়ে বস্তাবর বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা দ্রুত ঘটনা স্থলে যান। বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে হামলাকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
ধামইরহাট থানার ওসি জাকিরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ওই সম্পত্তি ব্যক্তিগত। আদিবাসীরা জোর করে দখল করে বাড়িঘর তৈরি করেছেন।
এ নিয়ে একাধিক মামলাও রয়েছে। আগের মামলায় আদিবাসীর দুইজনকে আটক করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। তবে এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো পক্ষই মামলা দায়ের করেন নি। মামলা হলে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ধামইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গণপতি রায় জানান, ওই সম্পত্তি আদৌও কি অবস্থায় আছে তা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।