আজ ৪৯তম স্বাধীনতা দিবস।
বাঙালি জাতির আত্মত্যাগের অন্যন্য এক অর্জনের দিন।
আজ ২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতা দিবস। জাতি আজ স্বাধীনতা দিবসের ৪৯তম বছরে পদার্পন করেছে। স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দীর সময় কড়া নাড়ছে সংগ্রামী এ জাতীর দোরগোড়ায়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নারকীয় এক সময় নেমে আসে বাংলাদেশে। সবুজ-শ্যামলে ঘেরা দেশের সাধারণ মানুষের উপর ইতিহাসের বর্বরোচিত আক্রমণ চালায় পাকিস্তান হানাদার বাহিনী। এক জাতি, এক ধর্মের হওয়া সত্বেও পরস্পরকে লড়তে হয় মানচিত্র আলাদা করার জন্য। ২৫ মার্চ সে রাতে নিহত হন অসংখ্য সাধারণ মানুষ। এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় শহর, নগর, বন্দর। এর পর দিন, ২৬ মার্চ ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশ এই দিনটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
এই স্বাধীনতা অর্জনে এদেশের আবাল বৃদ্ধ বনিতা, মুসলিম, অমুসলিম, আলেম-ওলামা সবাই রেখেছেন ভুমিকা। সবার সম্মিলিত ঐক্য এদেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। নয় মাসের রক্ত ঝড়ানো সে ইতিহাস আজও তাড়া করে ফেরে আমাদের। চেতনা জোগায় আমাদের লাল সবুজের পতাকায়। আমরা দাপিয়ে বেড়াই আমাদের জনপদ। এ জনপদের প্রতি ইঞ্চি মাটি আমাদের কাছে পবিত্র। আমাদের কাছে আমানত।
এ দিবসের নানা আয়োজন (গণমাধ্যম থেকে নেয়া)
আজ এ জাতি উদযাপন করবে তাদের স্বাধীনতার এ গর্বের প্রহর। ফুলে ফুলে ভরে উঠবে জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ দেশের সব স্মৃতির মিনার। দিনটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার বাণীতে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগে অর্জিত স্বাধীনতাকে আরও অর্থবহ করতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত মহান স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু সব সময় রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্যের ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসী এবং প্রবাসে বসবাসকারী বাঙালিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, ২৬ মার্চ বাঙালির আত্মপরিচয় অর্জনের দিন। পরাধীনতার শিকল ভাঙার দিন। শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। এই অর্জনকে অর্থপূর্ণ করতে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে, স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে আমরা দেশের প্রতিটি খাতে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জন করেছি। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল। আমরাই বিশ্বে প্রথম শত বছরের ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়ন শুরু করেছি। অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিশ্বের ৫টি দেশের একটি বাংলাদেশ।
যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন উপলক্ষে এবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রত্যুষে রাজধানীতে একত্রিশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
এদিকে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হবে। এ সময় সারা দেশে একযোগে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হবে। বিদেশে বাংলাদেশ মিশন পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সম্ভব হলে একই সময়ে এবং অন্যরা একইদিনে সুবিধাজনক সময়ে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন কর্মসূচি পালন করবে। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা এবং ঢাকা শহরে সহজে দৃশ্যমান উঁচু ভবনগুলোতে বৃহদাকারের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনা আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপে জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সজ্জিত করা হবে।
ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভিন্ন বাহিনীর বাদক দল বাদ্য বাজাবেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এবং সদরঘাট থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত নৌপথে বিশিষ্ট শিল্পীদের অংশগ্রহণে দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশিত হবে। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আজ সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। এ উপলক্ষে ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করছে। শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করবে।
এছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেয়া হবে। ডাক বিভাগ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে। দেশের সব হাসপাতাল, জেলখানা, শিশু পরিবার, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে প্রতিষ্ঠান ও শিশুদিবা যত্ন কেন্দ্রগুলোতে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
দেশের সব শিশুপার্ক ও জাদুঘর বিনা টিকিটে উন্মুক্ত রাখা হবে। চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা ও পায়রা বন্দর এবং ঢাকার সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জের পাগলা, বরিশাল ও চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজ বিকাল ২টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দেশের সব বিভাগ, জেলা ও উপজেলা সদরে সকালে কুচকাওয়াজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের সমাবেশ, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে অনুরূপ কর্মসূচি পালন করা হবে।
পেছন ফেরা ইতিহাস :
১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালিরা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় জন্ম নেয় নানা নাটকীয়তা। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আলোচনার আড়ালে নানা ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে শুরু করে। এক পর্যায়ে ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে সব ধরণের মানবতা ভুলে অন্ধকারে নিরীহ মানুষের বুকের ওপর ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে এক কুখ্যাত সামরিক অভিযান চালানোর নির্দেশ দেয় পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী। মৃত্যু, কান্না, ধ্বংস আর আত্মচিৎকারের মধ্যেই বাঙালিকে নামতে হয় অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে।
সেদিন রাতেই, ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। এর আগে তিনি চট্টগ্রামে অবস্থিত তত্কালীন ই.পি.আর এর ট্রান্সমিটারে করে প্রচার করার জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন। উইকিপিডিয়া। নিজ দেশের ভূমি থেকে শেষ শত্রুটিকে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে লড়াই করার আহ্বান জানান তিনি।
পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে বেজে ওঠে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে। ২৬ শে মার্চ বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাসেমসহ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের কয়েকজন কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এম.এ.হান্নান শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি মাইকিং করে প্রচার করেন। একই দিন সেনাবাহিনীর অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। উইকিপিডিয়া। এ ঘোষণার মাধ্যমেই উজ্জিবিত হয়ে উঠে জনতা। স্বাধীনতা অর্জনের আকুল আবেদন তৈরি হয় সবার মধ্যে। স্বাধীনতার মূল্য কতটা তা বুঝা যায়_এই ঘোষণায় জিয়াউর রহমানের অমর হয়ে থাকার বিষয়টিতেও। কথা আছে_আলোচনা আছে! কিন্তু তারপরও জিয়াউর রহমানের এ ঘোষণা জাতিকে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করেছে। বাঙালি জাতীর অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান জেলখানায় বন্দি হয়ে থাকার পরও এ জাতি স্বাধীনতা অর্জন করে মুজিবকে উপহার দিয়ে দেখিয়েছে।
২৬ শে মার্চ থেকেই মূলত শুরু হয় বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম। বাংলাদেশের বুক থেকে পুড়িয়ে দেয়া হয় পাকিস্তানের পতাকা। পতপত করে বাতাসে উড়তে শুরু করে সবুজের মাঝে লাল, লাল বৃত্তের মাঝে মানচিত্র খচিত পতাকা। অবশেষে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিনিময়ে, ৩০ লক্ষ শহীদ, দুই লক্ষ বীরাঙ্গনার ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীন হয় এই ভূখন্ড। পূর্ব পাকিস্তানের অতীত মুছে জন্ম নেয় স্বাধীন মানচিত্রের। স্বাধীন বাংলাদেশের।
জাতি আজ স্বাধীনতার ৪৯তম বছরে পদার্পণ করছে, এ বড় আনন্দঘন অনুভূতি। তবে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস যেমন গৌরবের, তেমনি বেদনারও। অনেক রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। আজ আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সেই সব জানা-অজানা শহীদকে, যারা তাদের বর্তমানকে বিসর্জন দিয়ে গেছেন এ দেশের ভবিষ্যৎকে সুন্দর করার জন্য। আমরা শ্রদ্ধা জানাই স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের সব সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধাকে।
মহাকালের বিচারে ৪৮ বছর খুব বড় সময় নয়। তবে এ সময়ের ব্যবধানে কোনো কোনো জাতির অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার নজিরও আছে। আজ আমাদের বিচার-বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন, স্বাধীনতার সাড়ে চার দশকে আমরা কতটা এগিয়েছি, কী ছিল আমাদের লক্ষ্য ও প্রত্যাশা, পূরণ হয়েছে কতটা? কোথায় আমাদের ব্যর্থতা, কী এর কারণ? স্বাধীনতার অন্যতম লক্ষ্য যদি হয় ভৌগোলিকভাবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বা ভূখণ্ডের অধিকারী হওয়া, তাহলে তা অর্জিত হয়েছে। তবে শুধু এটুকুই মানুষের প্রত্যাশা ছিল না। পাকিস্তানের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে দেশে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তিসহ মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা- এ প্রত্যাশাও ছিল ব্যাপকভাবে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের রায় মেনে না নেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে যুগপৎ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের দাবি প্রবল হয়ে ওঠে বাঙালির মধ্যে। তবে স্বাধীনতার পর দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেলেও তা হোঁচট খেয়েছে বারবার। বজায় থাকেনি এর ধারাবাহিকতা। ফলে আজও প্রাতিষ্ঠানিকতা পায়নি গণতন্ত্র। রাজনীতিতে ঐকমত্যের অভাব ও অসহিষ্ণুতাও এর বড় কারণ। অন্তত জাতীয় ইস্যুগুলোয় সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে ঐক্য থাকা প্রয়োজন হলেও কোনো শাসনামলেই তা দেখা যায়নি। এ ক্ষেত্রে দেশের চেয়ে দলের স্বার্থই হয়ে উঠেছে মুখ্য।
এটা সত্য, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষার প্রসার, নারীর উন্নয়ন, শিশুমৃত্যুর হার কমানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে আমাদের। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হতে যাচ্ছে দেশ। জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিলেও এর উত্থান ঠেকিয়ে রাখা গেছে। এর মূল কৃতিত্বের দাবিদার জনগণ। এ দেশের মানুষ ধর্মের নামে সহিংসতা সমর্থন করে না। তা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে; গড়ে তুলতে হবে রাজনৈতিক ঐকমত্য। সরকারকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নে হতে হবে অঙ্গীকারবদ্ধ। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে সব বিভেদ ভুলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সেই ঐক্যের ভিত্তিতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো আমরা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব- এ প্রত্যাশা সবার।
বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহায়তা করে আসছে সন্দেহ নেই। তারপরও বহু মুক্তিযোদ্ধা অসহায় ও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সেসব অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধার প্রতি দৃষ্টি দেয়া আমাদের সবার কর্তব্য। মুক্তিযুদ্ধে যেসব বিদেশি নাগরিক ও সংগঠন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন, ইতিপূর্বে তাদের পর্যায়ক্রমে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মাননা জানানো হয়েছে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ সন্দেহ নেই। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তালিকা অনুযায়ী সম্মাননাপ্রাপ্তের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। এ তালিকার বাইরেও রয়ে গেছেন মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী অনেক বিদেশি বন্ধু। আমরা আশা করব, পরবর্তী সময়ে তাদেরও রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করা হবে।
স্বাধীনতা দিবসে পাবলিক ভয়েসের সকল পাঠক, শুভানুধ্যায়ীসহ গোটা দেশবাসীর প্রতি রইল আন্তরিক ভালোবাসা ও অভিনন্দন।