
পাবলিক ভয়েস: বিএনপি-জামায়াতকে বাংলার জমিনে কোনোদিন ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না, ২৫ মার্চের এই দিনে এ শপথ নিতে হবে আমাদের। জাতিসংঘের আগামী সাধারণ অধিবেশনে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস প্রস্তাব তোলার আহ্বান জানিয়েছেন ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম।
এছাড়াও তিনি বলেন একাত্তরের পরাজিত শক্তি নিস্তেজ হলেও নিশ্বেস হয়নি। নারী নির্যাতন, সড়কের নৈরাজ্য এদের সাথে যারা জড়িত তাদের বিচার হতে হবে বলেও জানান তিনি। এছাড়াও স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালন করতে পারি নাই বলে এটিকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করেন আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ। ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণা করারও দাবি জানান হানিফ।
আজ সোমবার (২৫ মার্চ) বিকেল ৫টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণহত্যা দিবস উপলক্ষে ১৪ দল আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাসিম এ কথা বলেন।
১৪ দলের মুখপাত্র ও আ.লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, অপশক্তি বিএনপি-জামায়াত এখনও নিঃশেষ হয়ে যায়নি। তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিএনপি-জামায়াতকে বাংলার জমিনে কোনোদিন ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না, ২৫ মার্চের এই দিনে এ শপথ নিতে হবে আমাদের। কেননা, এই অপশক্তি ক্ষমতায় আসলে ৭১’র ঘাতকরা আবার জেগে উঠবে।
এসময় ১৪ দলের এ মুখপাত্র ২৬ মার্চ উপলক্ষে পাঁচদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ অনুযায়ী ২৬ মার্চ রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বাধীনতা দিবস পালন, ২৭ মার্চ আ.লীগের আলোচনা সভা, ২৮ মার্চ আজাদী লীগের আলোচনা সভা, ২৯ মার্চ ওয়ার্কার্স পার্টির আলোচনা সভা ও ৩০ মার্চ গণ আজাদী লীগের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সমাবেশে তিনি শেখ হাসিনার নির্দেশে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন আরও বেগবান করার জন্য নেতাকর্মীদের আহবান জানান।
পরে আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। পাকিস্তানি শাসকরা ভীত হয়ে ২৫ মার্চ কালো রাতে গণহত্যা চালান পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দিয়ে।
তিনি বলেন, আক্ষেপের সঙ্গে বলতে হয়, পৃথিবীর ইতিহাসে বৃহত্তর গণহত্যার স্বীকৃতি দেয়নি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। ৩০ লাখ মানুষ হত্যা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণহত্যা। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে পাকিস্তানি শাসক ও সেনাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে আমাদের।
যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করে দিয়েছেন। যারা এখনও পাকিস্তানের চেতনা বাস্তবায়নে কাজ করছে, সেই বিএনপি-জামায়াতকেও জাতির সামনে ক্ষমা চাইতে হবে।
সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, ৭১’র ঘাতকদের বাংলাদেশে থাকার কোনো অধিকার নেই। চিরতরে রাজনীতি থেকে তাদের খতম করতে হবে। বিএনপি-জামায়াত অপশক্তি খতম না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে, আজকের গণহত্যার দিবসে এ শপথ নিতে হবে।
সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, সত্য ইতিহাস জানলে বঙ্গবন্ধুকে জানা যাবে। ২৫ মার্চের কথা জানা যাবে। এখনই সঠিক ইতিহাস জানার সময়। তাই অধ্যয়ন করতে হবে। এদেশে জামায়াত-শিবির ও বিহারিরা মিলে মূলত ২৫ মার্চ গণহত্যা চালিয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি যাতে কোনোদিন ক্ষমতা ও বিরোধী দলে আসতে না পারে, গণহত্যার এ দিবসে আমাদের এমন শপথ নিতে হবে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকবো, বিরোধী দলেও থাকবো।
জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে ভয়ংকর গণহত্যার দিন বাংলাদেশের ২৫ মার্চ। এই গণহত্যার কথা প্রখ্যাত একজন ইংরেজি লেখকও বইয়ে তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, যারা শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, গণহত্যা দিবসের শপথ, তাদের চিরতরে নির্মূল করতে হবে। তাহলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন হবে। তাদের কবর রচনা করতে হবে। নির্মূল করতে পারলেই শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে।
জাসদের (বাদল) সভাপতি মঈন উদ্দিন খান বাদল বলেন, বাংলাদেশের মাটি পবিত্র, এ মাঠ পবিত্র। পাকিস্তানি সেনারা নাকে খৎ দিয়ে এ মাঠেই আত্মসমর্পণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে।
জাসদ (ইনু) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, বিএনপি-জামায়াত ২৫ মার্চের গণহত্যা মানে না। তারা বাংলাদেশকে অস্বীকার করলো। শেখ হাসিনার সরকার যখন ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণা করার দাবি জানালো, ঘাতক বিএনপি-জামায়াত নীরব থাকলো।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করলো, তখন বিএনপি ও জঙ্গিরা জামাতের পক্ষ নিলো। তারা জাতির পিতাকে স্বীকার করেনি। তারা আবার ছোবল মারার চেষ্টা করছে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালে ইতিহাসের এ পরম সত্য গণহত্যাকে ধামাচাপা দিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। এ গণহত্যা নিয়ে গবেষণা হয়েছে, বহু বধ্যভূমি পাওয়া যায়। শেখ হাসিনার সরকার এ দিবসকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করেছে। এখানে থেমে থাকলেই চলবে না, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করতে হবে। বিএনপি-জামায়াতকে নির্মূল করতে না পারলে, স্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়ন হবে না।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, সোহরাওয়ার্দী পবিত্র ময়দান। এ ময়দান থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণার জন্য জোর তৎপরতা চালাতে হবে। সুখী সমৃদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে।
২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়ে ক্ষমতাসীন ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা বলেন, ৭১’র ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা রুয়ান্ডার গণহত্যার চেয়েও ভয়াবহ। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াতের সহায়তায় ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বর হত্যাকাণ্ড চালান পাকিস্তানি সেনারা।