ইবনে মুসা
আজ থেকে প্রায় বিশ বছর আগের ঘটনা। শায়খুল কোররা, কুতুবুল আলম উজানীর হযরত ক্বারী ইবরাহীম রহ. এর ১১ ছেলের ছোট ছেলে তখনও জীবিত ছিলেন। যিনি প্রতি বছর ঐতিহাসিক চরমোনাইর মাহফিলে মধুমাখা কণ্ঠে পবিত্র কোরআনুল কারীমের তেলাওয়াত করতেন। চরমোনাই মাহফিল শেষে প্রতিবারই আমাদের বাড়িতে যেতেন হুজুর। বেশ আদর করতেন আমাদের। আমার 'হাবিবুর রহমান' নামটি হুজুরই রাখেন।
“মাওলানা ক্বারী মঞ্জুর আহমদ” রহমাতুল্লাহি আলাইহি। দশ বছর (আনুমানিক) পূর্বে তিনি ইন্তেকাল করেছেন, ইন্নালিল্লাহি অ ইন্না ইলাইহি রজিউন। অনেক বড় বুজুর্গ ছিলেন।
একদিন আমার বাবা তাঁকে নিয়ে কুয়াকাটা সমূদ্র সৈকতে ঘোরতে যান। সঙ্গে স্থানীয় গণ্যমান্যরাও ছিলেন। এখন তেমন দেখা না গেলেও আগে সাগরপাড়ে প্রচুর লাল কাকড়া দেখা যেত। দল বেঁধে বালুচড়ে দাঁড়িয়ে থাকত ওরা। সে এক অভাবনীয় দৃশ্য। তবে মানুষের ছায়া দেখলে মূহুর্তেই গর্তে লুকিয়ে পড়ত। ওরা এত দ্রুত ও আঁকাবাঁকা চলতে পারে— একাধিকজন মিলেও একটা কাকড়া ধরা সম্ভব নয়।
তাঁরা বালুচড়ে নামেন। পায়চারীর এক পর্যায়ে হুজুর দাঁড়িয়ে যান। নির্দিষ্ট একটি জায়গার দিকে একপলকে তাকিয়ে থাকেন। আহা! মহান মালিকের চোখ জুড়ানো এ মাখলুক কখনও দেখেননি তিনি।
হুজুর উজানীর আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতেন। তাই তাঁর কথায় আমরা বা আমাদের স্থায়ীরা বেশ মজা পেতাম। হুজুরের কথার সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করতাম আমরা। তাঁর হৃদয়াগ্রাহী নসিহত আর উপদেশগুলো অন্তর ছুঁয়ে যেত।
আমাদের অঞ্চলের মানুষ দেওবন্দ ও চিশতিয়া ছাবেরিয়া ত্বরীকার মুরব্বীদের কতটা মূল্যায়ন করেন তা বলে শেষ করা যাবে না। তাঁদের প্রতি আমাদের অঞ্চলের মানুষের ভক্তি-শ্রদ্ধাই অন্নরকম। তারই ধারাবাহিকতায় উজানীর হুজুরের চাহিদা মেটাতে আমরা ছিলাম সিদ্ধহস্ত। ক্বারী মঞ্জুর আহমদ রহ. আমাদের অঞ্চলে “উজানীর হুজুর” নামেই প্রসিদ্ধ ছিলেন।
হুজুর আকাঙ্খা প্রকাশ করেন একটি লাল কাঁকড়া হাতে নিয়ে দেখবেন বলে। চেষ্টা শুরু হলো। কাঁকড়ার পেছনে ছুটোছুটি শুরু করেন সফরসঙ্গীরা। আধাঘন্টা পার হয়ে যায়— কিন্তু কাঁকড়ার নাগাল পান না কেউই। শীতের মাঝেও ঘাম ঝড়ছিল প্রত্যেকের।
ভাবটা এমন ছিল— কাঁকড়াগুলো যেন তাঁদের সঙ্গে দুষ্টুমি করছিল! তাঁরা সামনে যেতেই কাকড়া হাওয়া! মানে গর্তে চলে যায়। তারা চলে গেলেই কাঁকড়ারা আবার মাথা ওঠায়! শেষ পর্যন্ত কাঁকড়া ধরার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হন সফরসঙ্গীরা।
কিন্তু হুজুর নাছোরবান্দা। লাল কাঁকড়া চাই-ই চাই। যখন দেখলেন এভাবে মিশন সার্থক হবে না, তখন হুজুর একটি কাঁকড়া লক্ষ্য করে ডাক দেন! হে কাঁকড়া! আমি তোদের কোনো ক্ষতি করব না। আমি তোদের এলাকার মেহমান। আমি শুধু তোদের দেখব। দেখব আল্লাহর সৃষ্টি কত নিপুণ। আবার ছেড়ে দেবো। ব্যস! সঙ্গে সঙ্গে একটি কাঁকড়া দাঁড়িয়ে যায়!
হুজুর কাঁকড়াটা হাতে নিয়ে উল্টে-পাল্টে দেখেন। কেঁদে ফেলেন আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি দেখে— অতপর কাঁকড়াটা ছেড়ে দেন। পরক্ষণে ঐ কাঁকড়াটাকেই আবার সবাই মিলে ধরার চেষ্টা করলেও সফল হতে পারেন না!
[এই ঘটনা প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা। বুজুর্গদের কারামত সত্য। তাদের কারামত বিশ্বাস করাটাও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকিদা। আল্লাহ তায়ালা বুজুর্গদের দিয়ে এমন অনেক কিছুই করিয়ে থাকেন]