রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলনের বাংলাদেশের অঙ্গসংগঠন ‘ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের’ ব্যবস্থাপনায় দিনব্যাপী জাতীয় শ্রমিক কনভেনশনের আয়োজন করা হয়েছে। সারাদেশ থেকে আগত হাজারো শ্রমজীবী মানুষের অংশগ্রহণে সম্পন্ন হয়েছে এ জাতীয় শ্রমিক কনভেনশন। কনভেনশনে শ্রমিকের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ১৯টি প্রস্তাবাবলি পেশ করা হয়েছে।
কনভেনশনের সভাপতি ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন এ প্রস্তাবাবলি পেশ করেন।
১৭ টি প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে :
১. সভ্যতার কারিগর উন্নয়ন উৎপাদনের কর্ণধার সুখী সমৃদ্ধ কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অগ্রসৈনিক শ্রমিকগণ কে সম্মানিত নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে এবং তাদের প্রকৃত মর্যাদা ও ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
২. আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সকল শ্রমিককে আইডি কার্ড প্রদান করে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং তাদের পরিবারের শিক্ষা চিকিৎসা ও পরিবহন ব্যয় অর্ধেক করতে হবে।
৩. শ্রমিকদের উদ্বুদ্ধ করে কাম্য মানের কৃষি পণ্য উৎপাদন এবং কৃষকের উৎপাদন ব্যয় পুষিয়ে নেয়ার স্বার্থে সার সেচ এবং বিনামূল্যে প্রদান করে প্রয়োজনীয় ঋণ প্রদান করতে হবে
৪. ম বেকারত্বের অবসান ঘটিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে নতুন নতুন কলকারখানা স্থাপন এবং রুগ্ন শিল্প কারখানাগুলোতে উৎপাদনের স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
৫. দ্রব্যমূল্যের আলোকে এবং মানবিক কারণে সকল শ্রমিকের সর্বনিম্ন মজুরি ১৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
৬. কথায় কথায় শ্রমিক ছাঁটাই, শ্রমিকদের উপর কোন জুলুম করা যাবে না এবং যৌক্তিক কারণ ছাড়া শ্রমিক ছাঁটাই করা যাবে না সাথে সাথে শ্রমিকের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৭. ব্যাপক উৎপাদনের স্বার্থে ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন করতে হবে।
৮. শ্রমিকের উপর কোন ধরনের শোষণ নিপীড়ন নির্যাতন করা যাবে না।
৯. মানবিক কারণে পায়ে চালিত রিক্সা ভ্যান গাড়ির লাইসেন্স ফি মওকুফ করতে হবে।
১০. সকল ধরনের ড্রাইভার দের লাইসেন্স ফি অর্ধেক করতে হবে।
১১. হকার্স পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ করা অমানবিক তাই জনসাধারণের চলাচলের বাধা সৃষ্টি না করে ফুটপাতের এক তৃতীয়াংশ জায়গায় হকার বসার ব্যবস্থা করতে হবে।
১২. অটো ইজি বাইক বন্ধের পাঁয়তারা বন্ধ করতে হবে ইজিবাইক চলাচলের জন্য আলাদা লেন ব্যবস্থা করতে হবে।
১৩. মৎস্য শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে সামুদ্রিক ট্রলারে অস্ত্রের লাইসেন্স দিতে হবে।
১৪. সামুদ্রিক জেলেগন অগ্রিম আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানার জন্য তাদের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে
১৫. ভ্রাম্যমাণ হকারদের বাসে ট্রেনে লঞ্চে উঠে পণ্য বিক্রির সুযোগ দিতে হবে।
১৬. হোটেল রেস্তোরাঁ শ্রমিকদের স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজের নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
১৭. শ্রমিকদের সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বীজ কীটনাশক এর ভেজালের কারণে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলে কৃষককে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আশরাফ আলী আকনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ খলিলুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত শ্রমিক কনভেনশনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়েখে চরমোনাই, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ ও যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক হাফেজ মাওঃ এটিএম হেমায়েত উদ্দীন, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।
বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমাদ বলেন, শ্রমিকরাই দেশের প্রথম শ্রেণীর এবং যোগ্য নাগরিক তাদেরকে পূর্ণ সম্মান এবং মর্যাদা দিতে হবে সাথে সাথে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় ইসলামী শ্রমনীতির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে তিনি বলেন শ্রমিকদের কষ্টে অর্জিত যে কোন কিছুর পূর্ণ হিস্যার দাবিদার তারা তাই তাদেরকে সুন্দর ভাবে চলার জন্য সব কিছুর ব্যবস্থা করতে হবে।
বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব বর্ষীয়ান রাজনীতিবীদ এটিএম হেমায়েত উদ্দিন বলেন, শ্রমিকদের উপার্জিত অর্থ দিয়ে এদেশের অসংখ্য মালিকরা রাতারাতি বড়লোক হয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বানিয়েছে কিন্তু শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার পায়নি তাই শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে।
বক্তব্য রাখেন আলহাজ্ব আব্দুর রহমান, আলহাজ্ব জান্নাতুল ইসলাম, মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ, ক্যাপ্টেন অব. ইব্রাহিম, হাফেজ মাওঃ ছিদ্দিকুর রহমান, মাওলানা মামুনুর রশীদ, ডা. আল আমীন এহসান, অধ্যাপক আব্দুল করীম প্রমূখ।