 
    
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরসহ সমগ্র কাশ্মীরে 'স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে কাজ করছে' দাবি করা সশস্ত্র সংগঠন জঈশ-ই-মুহাম্মদ-এর প্রধান মাওলানা মাসউদ আজহারের মৃত্যু নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে ভারত পাকিস্তানের একাধিক মিডিয়া।
ভারতীয় মিডিয়া দাবি করছে মাওলানা মাসউদ আজহারের মৃত্যু হয়েছে এবং তারা মৃত্যুসময় নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দাবি করছে। কোন কোন মিডিয়া বলছে ২ মার্চ শনিবার মাওলানা মাসউদ আজহার মৃত্যুবরণ করেছেন। তারা এ তারিখে মৃত্যুর কারণ বলছে, ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তিনি। আবার কোন কোন মিডিয়া বলছে ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের বালাকোটে কথিত হামলায় মাওলানা মাসউদ আজহার মৃত্যুবরণ করেছেন তবে সেদিনের বালাকোটের সে হামলায় কেহই মৃত্যুবরণ করেনি এ তথ্য নিশ্চিত করেছে একাধিক ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া। তারপরও ভারতীয় মিডিয়ার দাবি মাওলানা মাসউদ আজহার মৃত্যুবরণ করেছেন। এবং এ সংবাদ অনেক মিডিয়া “ব্রেকিং নিউজ” বলে একাধিকবার প্রচার করেছে।
তবে ভারতীয় মিডিয়ার এসব দাবির পক্ষে তাদের কোন ধরণের কোন প্রমান পেশ করতে দেখা যায়নি। এমনকি তারা কোন সূত্রে এই দাবি করছে তাও স্পষ্ট করে বলছে না।
[caption id="attachment_17041" align="aligncenter" width="494"]
মাসউদ আজহারের মৃত্যু নিয়ে ভারতের মিডিয়ার সংবাদ[/caption]
ভারতীয় মিডিয়ার এই দাবির পর পরই পাকিস্তানের টিভি মিডিয়া “টুয়েন্টিফোর নিউজ” চ্যানেলে পাকিস্তানের বিখ্যাত সাংবাদিক “হামিদ মীরের” মাওলানা মাসউদ আজহারের উপর একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে হামিদ মীর স্পষ্ট করে বলেছেন_মাওলানা মাসউদ আজহার মৃত্যুবরণ করেননি বরং তিনি পাকিস্তানে আছেন এবং বেঁচে আছেন। সাথে সাথে তিনি বলেছেন, “কিছুদিন পূর্বে মাওলানা মাসউদ আজহারের একটি ছোট অস্ত্রোপচার অপারেশন হয়েছে কিন্তু তিনি এরপর সুস্থ হয়ে উঠেছেন এবং বেঁচে আছেন”
[caption id="attachment_17042" align="aligncenter" width="508"]
পাকিস্তানী মিডিয়ার বিশ্লেষণ[/caption]
ভারতীয় মিডিয়ার দাবি সম্পর্কে হামিদ মীর বলেন, বিগত কয়েকদিন ধরে ভারতীয় সৈন্যবাহিনী এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের কাছে রাজনৈতিক এবং কুটনৈতিকভাবে হেরে যাওয়ার কারণে ভারতীয় মিডিয়া এই “মিথ্যে সংবাদ” প্রচার করছে ভারতীয় জনগণকে “প্রবোধ” দেয়ার জন্য।
[caption id="attachment_17044" align="aligncenter" width="497"] পাকিস্তানী মিডিয়া[/caption]
 পাকিস্তানী মিডিয়া[/caption]
তবে ভারতীয় মিডিয়ার এই অসত্য প্রচারের বিষয়ে হামিদ মীর অন্য আর একটি দিক তুলে ধরেছেন_তা হল, “ভারতীয় সরকার বিগত বেশ কিছু বছর ধরেই জাতিসংঘ ও আমেরিকার সহায়তায় মাওলানা মাসুদ আজহার কে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী ঘোষণার প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু মাওলানা মাসউদ আযহার আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষিত না হওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে পুলওয়ামা হামলার পরে সেই দাবি জোরালো করতে যাচ্ছে ভারত। যে কারণে মিডিয়া ব্যবহার করে মাসুদ আজহারকে প্রকাশ্যে আনতে চাচ্ছে তারা। মৃত্যুসংবাদ প্রচারিত হলে তারা ভেবেছে মাসউদ আজহার হয়তো প্রকাশ্যে বিবৃতি দিবে যাতে তার অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়। প্রতিবেদনে হামিদ মীর বলেছেন, ভারতীয় মিডিয়ার এই অপপ্রচারের কারণে তাদের নিজেদের অবস্থান ছোট হচ্ছে। ভারতে সরকারের উচিত নয় মিডিয়াকে এভাবে ভুল ভাবে ব্যবহার করা।
এমনকি জঈশের একটি বিবৃতিও প্রচার হচ্ছে সেখানে জঈশ প্রধানের মৃত্যুর খবর পুরোপুরি অস্বীকার করা হয়। একই সঙ্গে জানানো হয় যে, আল্লাহ কৃপায় ভালোই রয়েছেন জইশ প্রধান। শুধু তাই নয়, তিনি চিকিৎসায় ধীরে ধীরে সাড়া দিচ্ছেন বলেও জঈশের তরফে দেওয়া বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত : মাওলানা মাসউদ আজহারের সাথে ভারতের শত্রুতা অনেক পুরনো। মাসউদ আজহারের নেতৃত্বে থাকা জঈশ-ই-মুহাম্মদ সংগঠনকে তারা “সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে কারণ এ সংগঠনের কাছে ভারতীয় সৈন্যবাহিনী অনেকবার মার খেয়েছে__ ইতোপূর্বে মাসউদ আজহারকে ভারত সরকার একবার গ্রেফতার করে পাঁচ বছর বন্দিও রেখেছিল কিন্তু মাসউদ আজহারের সঙ্গীরা ভারতীয় একটি বিমান ছিনতাই করে শেষ পর্যন্ত মাওলানা মাসউদ আজহারকে ভারতীয় জেল থেকে মুক্ত করে নিয়েছিল। সে থেকেই মাওলানা মাসউদ আজহার ভারতের প্রথম টার্গেট হয়ে আছে।