বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর তীরে চরমোনাই ময়দানে লাখ লাখ মানুষ আত্মার খোরাক নিতে জড়ো হয়, তাঁদের প্রিয় শায়েখদ্বয়ের ডাকে। যাদেরকে "রূহের চিকিৎসক" হিসেবে অভিহিত করা হয়।
একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, ওখানে আগতরা শুধুমাত্র ফরজ ইবাদতের তালিম নিতে যায় না। ইসলামের ৫ টি মূল ভিত্তির ব্যাপারটা তো সর্বাগ্রে। এর বাইরে যে সব ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত ও মুস্তাহাব রয়েছে সে সব বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দেয়ার আশ্চর্য কেন্দ্র হলো চরমোনাই ময়দান।
মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করিম, পীর সাহেব হুজুর উদ্বোধনী বয়ানে বলছিলেন, চরমোনাই ময়দান বড়ই বরকতের, এখানে আগতদের মাঝে তাকওয়া বৃদ্ধি পায়। বান্দাদের আমল আখলাকে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। চরমোনাই থেকে ফেরার পর অধিকাংশ মানুষ পিছনের জীবনাচরণ থেকে ফিরে আসে। তাঁরা কবরের আযাব থেকে বাঁচতে চায়, জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণ চায়। ফলশ্রুতিতে তাঁদের নতুন জীবনযাত্রার শুরুটা হয় মাহফিল থেকে ফেরার পরই।
মাহফিল বলতে সমাজ বুঝে, এক বা একাধিক বক্তা এসে সুরেলা কন্ঠে ওয়াজ করবে মধ্যরাত পর্যন্ত। কিন্তু ফজরের নামাজের খবরও থাকে না দর্শক শ্রোতাদের। তাঁরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, কারণ সে তো মাঝরাত পর্যন্ত ওয়াজ মাহফিলে ছিল। এমনটা চলছে এখন। কিন্তু হাতে গোনা যায় এমন কিছু মাহফিল আছে যার চরিত্র সম্পূর্ণ আলাদা।
চরমোনাই ময়দানে কি হয়? কেন চরমোনাইকে নিয়ে এতো আলোচনা?
চরমোনাই ময়দানে শায়েখদ্বয় গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেন। ঈমান আমল আখলাক মোয়ামেলাতসহ ইসলামের এমন কোন শাখা নেই, যা নিয়ে নসীহত করা হয় না। তবে আল্লাহকে চেনা ও জানার ব্যাপারটা এখানে বিশেষ গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা হয়। মারেফাতের বয়ানটা খুব যায়!
আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশ্যে যে সকল স্তর অতিক্রম করা হয় তা ই তরিকত। আর শরীয়ত বিনে তরিকত হাছিল করা সম্ভব নয়। এ সব আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়ে শায়েখদ্বয়ের পাশাপাশি চরমোনাই তরিকার প্রবীণ মুরব্বীরাও আলোচনা করেন।
প্রতি মাহফিলে বিদেশী অতিথিগণ নসীহত প্রদান করেন। বিশেষ করে দারুল উলুম দেওবন্দের বিশ্ব বরেণ্য উসতাযগন তাঁদের আলোচনায় চরমোনাইকে নিয়ে বেশ উচ্ছাস প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে তাঁদের দৃষ্টিতে চরমোনাইওয়ালারাও হাক্কানিয়াতের নিরিখে উত্তীর্ণ, তাঁরা এটা জোর গলায় বলে থাকেন। তাঁরা বারবার এখানে আসতে ব্যাকুল।
মিশরের আলআযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর চরমোনাইয়ের মাজমা দেখে তো বলেই ফেললেন, পবিত্র হজ্বের পর এটাই সবচেয়ে বড় ইসলামী সম্মেলন। তিনি এখানে আসতে পেরে নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করছেন। দুনিয়ার অনেক দেশ ঘুরেছেন কিন্তু এমন আল্লাহওয়ালাদের পরিবেশ আর তিনি দেখেননি। তাঁরা যা ই বলুন, আসলে দেখতে হবে চরমোনাইতে আগন্তুকদের মাঝে প্রভাবটা কেমন হয়!
চরমোনাই মাহফিল থেকে ফিরে সাধারণ মানুষ যে হারে আল্লাহমুখী হয়, তা এ দেশের অন্য কোন মাহফিল থেকে ফিরে মাওলার দিকে ধাবিত হওয়াদের চেয়ে তুলনামূলক অনেক বেশী। ঠিক এখানেই চরমোনাইয়ের খেদমতের অনন্যতা। এটা মহান রাব্বুল আলামীনের খাছ মেহেরবানী। আলহামদুলিল্লাহ এ মাহফিল মঞ্চে পীর সাহেবদের হাতে ১০ জনেরও বেশী মানুষ ইসলাম কবুল করেছে। মাহফিল আয়োজনের স্বার্থকতা এখানেই। কিয়ামত পর্যন্ত এ তরিকার খেদমত চলতে থাকুক। হাক্কানিয়াত প্রশ্নে কখনো যেন ছোট একটি প্রশ্নও যেন না উঠে, সে ব্যাপারে মহান আল্লাহর দরবারে আগাম আবদার পেশ করা হলো।
লেখক-