ভারত সে পথেই এগুচ্ছে। এদিকে নরেদ্র মোদি এই হামলার প্রতিশোধ নিতে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন তার সেনাবাহিনীকে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার প্রতিফলন ঘটেছে। এরই মধ্যে ভারতের সেনাবাহিনী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ভারতের রাজস্থানের ফোখরানে যুদ্ধের মহড়া প্রদর্শন করেছে সেনাবাহিনী। ভারতের মিডিয়াগুলো জানায়, ১৮ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামার পিঙ্গলানে সেনাবাহিনীর ইনকাউন্টারে জাইশ-ই-মুহাম্মাদের উচ্চপদস্থ কমান্ডার কামরান ও আইইডি এক্সপার্ট আব্দুর রশিদ গাজী নিহত হন। নিহত আব্দুর রশিদ গাজী সিআরপিএফের গাড়ি বহরে হামলার পরিকল্পনাকারী ছিলেন। এই অভিযানে সেনাবাহিনীর ৪ সদস্যও নিহত হন। অন্যদিকে পাকিস্তানের সরকারি ওয়েবসাইটগুলো ভারতের হ্যাকাররা হ্যাক করতে শুরু করেছে। ভারত যেকোনো মূল্যে পাকিস্তানকে উত্ত্যক্ত করতে ব্যস্ত এখন।
এদিকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ভারত বিশটারও বেশি দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এই দেশগুলোর মধ্যে আমেরিকা, ইসরায়েলসহ প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাও ছিলো। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গেও ভারত আলোচনা করছে। এর মাধ্যমে ভারত আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন আদায়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
৩.
পাকিস্তান অভিযোগের জবাব বুঝেশুনেই দিচ্ছে। দেশটির তরফ থেকে বলা হয়, নরেদ্র মোদি দ্বন্দ্ব লাগানোর জন্য অধৈর্য্য হয়ে পড়েছেন। এদিকে ভারতের সাইবার আক্রমণকে সফলভাবে প্রতিহত করছে পাকিস্তান। সীমান্তেও নজরদারি বাড়িয়েছে দেশটি। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, কাশ্মিরে যে হামলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভারতের নিজস্ব ব্যাপার। ভারতের নাগরিকই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত। পাকিস্তানের কোনো নাগরিক সেখানে হামলা করে নি। ভারত কোনো প্রমাণ ছাড়াই অভিযোগ তুলেছে। জাইশ-ই-মুহাম্মাদের ওপর অভিযোগের কোনো প্রমাণ না দিয়ে তারা হৈ-হুল্লোড়ে মত্ত। এটা যুক্তিসঙ্গত অভিযোগ নয়।
৪.
ভারতের ওপর এমন হামলা ২০১৬ সালেও একবার হয়েছিলো। উরিতে এই হামলা হয়। তখন ১৮ জন ভারতীয় সৈনিক নিহত হয়। তার জবাবে ভারত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছিলো। তারা গোপনে পাকিস্তানের ভেতরে গিয়ে জেহাদি সংগঠনের ঘাটিতে হামলা করে। এখনো সেই পথ খোলা আছে ভারতের জন্য। বিশেষত পাকিস্তানে অবস্থিত জাইশ-ই-মুহাম্মাদের প্রধান মাওলানা মাসউদ আজহার, হাফেজ সাঈদ ও সিইয়্যেদ সালাহউদ্দীনকে হত্যার তীব্র প্রচেষ্টা চালাতে পারে। এরা ভারতে জঙ্গি নেতা হিসেবে বেশ সমালোচিত।
অথবা 'নন স্টেট অ্যাক্টর্সদের' ব্যবহার করে হামলা করতে পারে। যেভাবে পাকিস্তান থেকে আত্মঘাতী হামলা হচ্ছে। সেভাবে ভারতও জবাবি হামলা করতে পারে। মানে, সরাসরি সামরিক বাহিনী বা কোনো সরকারি এজেন্সি যুক্ত থাকবে না। রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে নেই এমন সব ‘এলিমেন্ট’ ব্যবহার করে পালটা জবাব দিবে ভারত। অবশ্য এরকম কাজে পশ্চিমা দেশগুলো হয়তো ভারতকে সমর্থন দিবে না। তবুও এই বিকল্পগুলো ভারতের জন্য নিরাপদ। এ ছাড়া কূটনৈতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক আর সামরিক_এই চারটি ধারায় এগুলে ভারতেরও যথেষ্ট ক্ষতি হয়ে যাবে। এশিয়া শাসনের যে স্বপ্ন দেখছে ভারত, তা যোজন যোজন পিছিয়ে পড়বে। চিনের সাথে ভারতের ক্ষমতার যে প্রতিযোগিতা চলছে। সেখানে ভারত হেরে যাবে। চিনের সঙ্গে টেক্কা দেয়ারও শক্তি হারিয়ে ফেলবে ভারত।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, পাকিস্তান উত্তেজিত না হলে বড়ো কিছু ঘটানো ভারতের পক্ষে সম্ভব না। ভারত সর্বদা পাকিস্তানকে উত্তেজিত করবার প্রচেষ্টায় আছে। যদি কোনোভাবে দুই দেশে যুদ্ধ বেধে যায়। ভারত আন্তর্জাতিক সমর্থন যতোটা আদায় করতে সক্ষম হবে। তারচে' ঢের এগিয়ে থাকবে পাকিস্তান। কূটনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের বিপক্ষে যেতে চাইবে না। যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া শাসনের জন্য ভারতের চেয়ে পাকিস্তানের ওপর এখনো বেশি নির্ভর।
এদিকে তালেবানের সঙ্গে সমঝোতা চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এই অবস্থায় পাকিস্তানের বিরোধিতা করলে তালেবান বেঁকে বসতে পারে। তালেবান তার সুবিধার জন্যই পাকিস্তানের পাশে থাকবে। চিন সম্পূর্ণ পাকিস্তানকে সমর্থন দিবে তার নিজের স্বার্থেই। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গিয়ে ভারত তাই সুবিধা করতে পারবে না। মুসলিমবিশ্বতো আছেই পাকিস্তানের পাশে।
আবার জনবলের দিক দিয়েও পাকিস্তান সমৃদ্ধ থাকবে। পাকিস্তানে হামলা হলে, সে দেশের জিহাদি গ্রুপ, আফগানের জিহাদি গ্রুপগুলো এগিয়ে আসবে। আইএসআই তাদের পরিপূর্ণ ব্যবহার করবে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর বাহিরে যারা আসবে। তারা দীর্ঘদিনের যুদ্ধে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নওজোয়ান থাকবে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও আমেরিকার মতো দেশগুলোর সঙ্গে যুদ্ধে জেতা মুজাহিদগণ থাকবে এখানে। এরা উচ্চ বিধ্বংসী মারণাস্ত্র মোকাবেলা করে অভ্যস্ত। ভারত সামরিক সাহায্য কিছুটা পেলেও জনবলে ঘাটতি থাকবে। এদিক দিয়ে শূন্যের কোঠায় থাকবে তারা। এসব বিবেচনায় বোঝা যাচ্ছে, যুদ্ধে সুবিধা ততোটা করতে পারবে না ভারত।
ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ভোটব্যাংকের জন্য খেলা খেলবেন। কিছুদিন পর ভারতে লোকসভা নির্বাচন। বিজেপি পাকিস্তান বিরোধী কার্যকলাপের দ্বারা বিরাট সংখ্যক ভোট জোটাবে নিজেদের ভাগ্যে। এজন্য হয়তো পাকিস্তানকে উত্ত্যক্ত করতে সচেষ্ট দেশটির পলিসি। যুদ্ধ যদি না বাধে, তবুও এমন কিছু ঘটানোর চেষ্টা করবে বিজেপি সরকার। যার মাধ্যমে বিজেপি জনগণের দিল জয় করে নিবেন।
যা কিছুই ঘটুক। কাশ্মিরের জনগণের জন্য তা সুখকর হবে না। ভারত-পাকিস্তান যতোদিন রেষারেষিতে থাকবে৷ ততোদিন কাশ্মিরের ভাগ্যে ভালো কিছু নেই। কাশ্মির এমন একটা ইস্যু, এর মাধ্যমে দুই দেশই নিজ নিজ দেশের রাজনীতির হিসাব উলোটপালোট করতে পারে। কাশ্মির স্বাধীন হলেই এই দ্বন্দ্বের সমাধান হতে পারে।