সামছ্ আল ইসলাম ভূঁইয়া। শিক্ষক, রাজনৈতিক
আহমদিয়া জামাত তথা কাদিয়ানী সম্প্রদায় ২০১৩ সনে তাদের শতবার্ষিকী উদযাপন করল। সে সময় ঢাকার কয়েকটি পত্রিকায় খবরটি ছাপা হয়েছে ১৯ জানুয়ারি শনিবার। ওই খবরে দেখা গেছে, বাংলাদেশে কাদিয়ানী সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠার শতবার্ষিকী উপলক্ষে দেশের ৩৬ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ‘কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপক স্মারক’ প্রদান করেছে।
ঢাকার বকশিবাজারে ১৮ জানুয়ারি কাদিয়ানীদের জাতীয় কেন্দ্রে আয়োজিত ‘কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন’ অনুষ্ঠানে এই স্মারক দেওয়া হয়। এখানে ‘স্মারক’ বলতে বুঝানো হয়েছে সম্মাননা পদক। কদিয়ানীদের প্রতি সহযোগিতার এ পদক পেয়েছে কিছু প্রতিষ্ঠান ও ক’জন ব্যক্তি।
প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ব্লাস্ট, অধিকার, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, জাতীয় আইনজীবী পরিষদ, নারীপক্ষ, দ্য ডেইলি স্টার, নিউ এজ ও দৈনিক সংবাদ। আর ব্যক্তিরা হচ্ছেন- সুফিয়া কামাল, কে এম সোবহান, কবীর চৌধুরী, গাজীউল হক, ফয়েজ আহমদ। এরা সবাই মরণোত্তর পদক পেয়েছেন। জীবিতদের মধ্যে পেয়েছেন শাহরিয়ার কবির, রাশেদ খান মেনন এমপি, হাসানুল হক ইনু এমপি, মঈনুদ্দীন খান বাদল এমপি, এডভোকেট সুলতানা কামাল, ড. কামাল হোসেন, ড. হামিদা হোসেন, ড. ফস্টিনা পেরেরা, ড. আসিফ নজরুল, শরিফ এ কাফী, এ এফ হাসান আরিফ (প্রাক্তন এটর্নি জেনারেল), ব্যারিস্টার সারা হোসেন, খুশী কবীর, ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, রোজালিন ডি কস্ত, নাঈম মোহাইমেন, অধ্যাপক যতীন সরকার, কাজী মুকুল, প্রফেসর কাজী নূরুল ইসলাম, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, প্রফেসর পারভিন হাসান, তালেয়া রেহমান।
এই কৃতি ব্যক্তিদের ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা সবাই চিনি। গত ৩ যুগে ধর্মীয় বিষয়ে এদের অধিকাংশের ভূমিকা সবিশেষ পরিচিত। কোনো মসজিদ, মাদরাসা, মাহফিল, জলসায় উঁকি দিয়ে দেখতে দ্বিধাগ্রস্ত হলেও এরা কাদিয়ানীদের জমকালো অনুষ্ঠানে বেশ উদ্দীপনা ও তৃপ্তি নিয়েই গিয়েছেন এবং পদক পেয়ে ধন্য হয়েছেন। চারদিকের খোঁজ-খবর রাখা এসব রথী-মহারথীরা না জানার কোনো কারণ নেই যে, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকায় সংসদের অধিবেশন ও নিয়মিত আদালতে দীর্ঘ জবানবন্দি, সাফাই ও শুনানির পর কাদিয়ানী সম্প্রদায় একটি ভুয়া ও প্রতারক গোষ্ঠী হিসেবে রায় পেয়েছে। সেসব শুনানিতে কাদিয়ানীদের তথাকথিত ‘বিশ্বখলিফা’সহ তাদের আন্তর্জাতিক চাঁই-চামুন্ডাদের অনেকেই জবানবন্দি দিয়েছে। স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়ে জব্দ ও অপমানিত পর্যন্ত হয়েছে। তাছাড়া ওআইসির সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করা হয়েছে। কোনো মুসলিম দেশেই তাদেরকে মুসলিম মনে করা হয় না। তারপরও ইসলামের সঙ্গে জোর করে তাদের জুড়ে দেওয়া সম্পর্ককে যারা সমর্থন জোগান সেসব মহাজনদের ইহকাল-পরকালের পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ ভালো জানেন।
আমরা শুধু বিনয়ের সঙ্গে জোর দিয়ে বলতে পারি, কাদিয়ানীরা ইসলামের ভেতরের কোনো দল গোষ্ঠী নয়-এ সত্যটা বোঝার চেষ্টা করা উচিত। খতমে নবুওয়তের অমোঘ বিশ্বাস ও চেতনার গলায় যে কাদিয়ানীরা করাত চালায়-তাদের প্রতি যারা সাহায্যের হাত বাড়ান, তারা মুসলমানদের কাছে ভালো মানুষ হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন না।
কাদিয়ানী মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা মির্জা গোলাম আহমেদ কাদিয়ানী ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের গুরুদাস পুরের কাদিয়ান নামক স্থানে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি স্ববিরোধী কিছু দাবীর মাধ্যমে নিজেকে একটি মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করেছেন। ইতিহাসে তার মত আরো অনেকে এভাবে বহু মতবাদ এনেছেন। শিয়া, বাহাই, ইসমাইলীয়া সম্প্রদায় সহ বিশটির অধিক মতবাদ এখনও দুনিয়াতে বিদ্যমান রয়েছে। তবে তারা কেউ কাদিয়ানীদের মত এতটুকু সমস্যা নিয়ে হাজির হয়নি। যার কারণে প্রতিটি সচেতন মুসলিম জনগোষ্ঠীর কাছে তারা গ্রহণযোগ্য হয়নি বরং তাদের অবস্থান মুসলিম সমাজে নিত্য নতুন সমস্যা তৈরি করে চলছে।
আরও পড়ুন : কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে : আমীর, ইসলামী আন্দোলন
মির্জা গোলাম আহমেদ নিজেকে কখনও ‘নবী’ কখনও ‘মসীহ’ কখনও ‘ইমাম মাহদী’ দাবী করেছেন। মির্জা গোলাম আহমেদ দাবী করেছেন তার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী এসেছিল। ইসলামের মৌলিক দাবী হল মোহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর শেষ নবী ও রাসুল, তাঁর পরে পৃথিবীতে আর কোন নবী আসবেন না। তার প্রতিটি দাবী একটির সাথে অন্যটি সাংঘার্ষিক এবং সরাসরি স্ববিরোধী। তার এই স্ববিরোধিতার যাঁতাকলে পড়ে কাদিয়ানীরা ও দ্বিধা বিভক্ত। পাকিস্তানের কাদিয়ানীরা বলেন তিনি একজন ইমাম ছিলেন, ভারতীয় কাদিয়ানীরা বলেন তিনি একজন নবী ছিলেন, বাংলাদেশের কাদিয়ানীরা বলেন মোহাম্মাদ (সাঃ) কে তারাও নবী হিসেবে মানে। মূলত প্রতিকূল অবস্থা সামাল দিতেই কাদিয়ানীরা এই পদ্ধতির অবলম্বন করে। আর কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের সহযোগিতা যারা করছেন তারা পেটের ক্ষুধায় পড়েই করছেন। বিচারপতি কে, এম, সোবহান, অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, শাহরিয়ার কবীর, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিষ্টার রোকনুদ্দিন, বিচারপতি হাবিবুর রহমান, ড. ইউনুস, মতিউর রহমানদের মত কাদিয়ানী সমর্থকরা কাদিয়ানী সালানা অনুষ্ঠানের মধ্যমনি হয়ে থাকে। এই এজেন্টদের জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকীয়তে ছাপা হয় “কাদিয়ানীরা অমুসলিম, এ দাবী অন্যায়”।
তাই, কাদিয়ানীদের পাশাপাশি তাদের এজেন্টদের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কাদিয়ানী ও কাদিয়ানীদের সহযোগী ব্যক্তি ও সংগঠন গুলোকে বয়কট করতে হবে সর্বত্র।
আরও পড়ুন : কাদিয়ানীরা স্বাধীনতারও শত্রু ছিল : মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া