১৯৯৩ ইং সনে বাংলাদেশে প্রথম ভালোবাসা দিবসের কথা শোনা যায়। বাংলাদেশে এর প্রবর্তক 'যায় যায় দিন' সম্পাদক শফিক রেহমান। তিনি তাঁর সাপ্তাহিক পত্রিকায় একাধিকবার ভালোবাসা সংখ্যা বের করেছিলেন।
তিনি দীর্ঘদিন ইংল্যান্ডে বসবাস করায় পাশ্চাত্যের এ সংস্কৃতিটি ভালোভাবে বে রপ্ত করে তিনিই প্রথম এ দেশে নিয়ে এসেছিলেন।
আর এ দেশের মিডিয়া ভালোবাসা দিবস"কে বেশ করে প্রমোট করেছিল। কারণ, যায় যায় দিন ছিল একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। সেই একটা পত্রিকার মাাধ্যমে সারা দেশে একটি নতুন ভাবনা ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব ছিল না।
তরুণ তরুণীদের মাঝে প্রেম- ভালোবাসার জয়গান গাইতে গিয়ে মিডিয়ারা ফ্রিতে মার্কেটিং করেছে। ফলে যা হবার তা ই হয়েছে। আজ অজপাড়াগাঁয়ের পঞ্চম শ্রেণীর একজন মেয়ে শিক্ষার্থীও জানে ভালবাসাবাসির দিনটা চৌদ্দই ফেব্রুয়ারী। সে দিনটা যেন রিজার্ভ সে কম্মের জন্য। "কেউ কিছু কইবেনা"- এটার যেন সামাজিক বৈধতাও রয়েছে।
আসলে এটি পুরোদস্তুর খ্রিস্টানদের সংস্কৃতি। ধর্মযাজক সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন তৎকালীণ রাজার অবাধ্য হয়ে যুবক-যুবতীদেরকে প্রেম-ভালবাসার দীক্ষা দিচ্ছিলেন, এমন রটনা আছে। রাজা ছিলেন দেবদেবীর মুর্তি পূজারী। ভ্যালেন্টাইনকে খৃস্টধর্ম ত্যাগে বাধ্য করতে ব্যর্থ হবার কারণে রাজা ক্লডিয়াস সে অপরাধে তাঁকে ফাঁসির হুকুম দেন।
জেলখানায়ও তাঁর প্রেমচর্চা থামানো যায়নি, এক কারারক্ষীর অন্ধ মেয়ের সাথে সে প্রেম করেছিলেন এবং তার অন্ধত্বও ভালো করেছিলেন কিন্তু ফাঁসির হুকুম রদ হয়নি। ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ই ফেব্রুয়ারী তাঁর ফাঁসির দিন প্রেমিকাকে একটি চিরকুটের মাধ্যমে মেসেজ দেন "ফরম ইওর লাভ, ভ্যালেন্টাইন"।
এরপর থেকে এ দিনটিকে ভ্যালেনটাইন ডে হিসেবে পালিত হচ্ছিলো ইউরোপে। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম ভালোবাসা দিবসকে প্রেমের উচ্ছাস হিসেবে বেছে নেয়।
আমি শফিক রেহমানের যায়যায়দিনের একনিষ্ঠ পাঠক ছিলাম স্টুডেন্ট লাইফে। যায়যায়দিনের প্রায় সকল কপি ভলিয়্যুম হিসেবে এখনো আমার কাছে আছে। কিন্তু তাতে কোন যৌন উন্মাদণার বাণী ছিলনা, যা দেশে হরহামেশা চলছে।
এ দেশে ভালোবাসা দিবসের নামে যা চলছে সেটা শতভাগ অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও যৌনতৎপরতা। কোমলমতি মেয়েরা এখানে ভিক্টিম। তাঁরা এ দিনে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। তোমরা ডাকে সাড়া না দিলে পোলাপান কি আর করতো?
কথা হইলো গিয়া, তোমরা কেন এ দিন বের হও খুকী? তুমি বাবা মা কে ফাঁকি দিয়ে বের হয়ে ফাকিংয়ে লিপ্ত হলে দায়ী তো তুমিই। নারীত্বের মূল্যবান সম্পদ কুমারীত্বটা হারায়ে হয়তো খানিকটা মনখারাপ করো অতঃপর শাওয়ারের তলে দাঁড়ায়ে গা-গতর একটু পয়পরিস্কার হবার চেষ্টা করো।
এ দেশটা মুসলমানদের। মুসলিম সভ্যতা বিবর্জিত এ অপসংস্কৃতি আজ ডানা মেলেছে। সমাজের এ নোংরামী আর মানা যায় না। একটি বিশুদ্ধ দেহ নিয়ে স্বামীর ঘরে যাবার প্রয়োজনীয়তাটা আজ অনেক যুবতীর নিকট অপাংক্তেয়।
অবক্ষয়ের এ সময়টা আর দীর্ঘায়িত করতে দেয়া যাবে না। প্রশাসনের কঠোরতা, সামাজিক দৃষ্টিভংগীর পরিবর্তন, অভিভাবকদের কঠিন খবরদারি আর আল্লাহভীতিই পারে ঠাডাপড়া এ প্রচলনটির তামাদি করতে।
লেখক : এক্টিভিস্ট, বিশ্লেষক।