পঞ্চগড়ে কাদিয়ানী জলসাকে কেন্দ্র করে সাধারণ মুসুল্লিদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের দাবি এসময় তাদর ১৭ সদস্য আহত হয়েছেন। সবে সাধারণ মুসুল্লিদের দাবি তাদের ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছে।
জানা যায়, পঞ্চগড়ে আহমদীয়া কাদিয়ানী জামাতের কথিত ইজতেমা বন্ধের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আলেম ওলামা ও দেশের ধর্মপ্রান মুসলমানরা আন্দোলন করে আসছেন। কিন্তু তারপরও তাদের এই তথাকথিত ইজতেমার বিষয়ে স্থানীয় প্রতিনিধি ও কিছু কাদিয়ানীদের সঙ্গীদের জোর প্রচেষ্টায় কথিত ইজতেমা বন্ধ করা যাচ্ছিলো না।
গতকাল (১২ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় মুসলিম জনগোষ্ঠি এবং মহানবী স. এর খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটির উদ্যোগে কাদিয়ানীদের ইজতেমা বন্ধের দাবিতে সবাই একত্রিত হয় এবং মিছিল করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের কার্যক্রমের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আলেম উলামা ও সাধারণ মুসুল্লিগণ।
এক্ষেত্রে আলেম ও মুসলমানদের দাবি হল কাদিয়ানীরা তাদের নিজস্ব পরিচয় ইজতেমা করুক বা যাই করুক তা নিয়ে তাদের কোন অভিযোগ নেই কিন্তু মুসলিম পরিচয় তারা কোন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। কারণ এতে সাধারণ মুসলমানরা বিভ্রান্তির শিকার হয় বিশ্বব্যাপী সকল মুসলিম স্কলার এবং মুসলমানরা একমত কাদিয়ানীরা মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তারা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খতমে নবুয়াত সহ ইসলামের অনেক আকিদাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে থাকে এমনকি তাদের গুরু গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে নবীও দাবি করে এছাড়াও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেয়ে হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহাসহ নবী পরিবারের অনেক কে নিয়ে তাদের ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য রয়েছে।
প্রসঙ্গত : পঞ্চগড় শহরের আহমদনগর এলাকায় আগামী ২২, ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি বার্ষিক ছালনা জলসা করার ঘোষণা দিয়েছিলো কাদিয়ানীরা। একই এলাকায় মুসলমানদের ওয়াজ মাহফিল থাকায় সমস্যা সমাধানে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উভয় পক্ষের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একাধিকবার ম্যারাথন বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার সন্ধায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ নিয়েই সিরিজ বৈঠক চলছিল। সমস্যা সমাধানের জন্য বৈঠকে যোগ দেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সাজ্জাত হোসাইন, রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী। বৈঠকে কোন সমাধান না আসায় সন্ধ্যায় বিক্ষোভসহ শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে একত্রিত হতে থাকেন মুসল্লিরা। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে লাঠিচার্জ করে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। এক পর্যায়ে কাদিয়ানীরাও এই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। উভয়পক্ষের সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ লাঠিচার্জ এবং কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। লাঠিচার্জ ও পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল নিক্ষেপে ৩ পক্ষের প্রায় ৪০ জন আহত হন। এসময় ১৭ পুলিশ সদস্য আহত হয়। তাদেরকে পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় অতিরিক্তজেলা প্রশাসক গোলাম আযম ঘটনা স্থলে এসে হ্যান্ড মাইকে সবাইকে শান্ত হতে বলেন।
ঘটন স্থল পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সাজ্জাত হোসাইন, রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী,জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন, পুলিশ সুপার গিয়াস উদ্দিন আহমদ, ১৮ বিজিবি ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক নবিউস সুন্নাহসহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা। তারা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।