স্পোর্টস ডেস্ক
২০১৪ সালের ৮ জুলাই। এ দিনটাকে কি কখনো ভুলতে পারবেন ব্রাজিল সমর্থকেরা? কোনোভাবে ক্যালেন্ডার থেকে একটা দিন বাদ দেওয়া গেলে, তারা নিশ্চয়ই এ দিনটাকে বেছে নিতেন!কিন্তু তা কখনোই সম্ভব না। টিম ব্রাজিল এবং ব্রাজিল এর সমর্থকদের জন্য ইতিহাস হয়ে থাকবে।
ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে সেদিন জার্মানির মুখোমুখি হয়েছিল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। যদিও কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে পাওয়া চোটের কারণে বিশ্বকাপের বাকি অংশের জন্য ছিটকে যাওয়ায় এ ম্যাচে ছিলেন না দলের সবচেয়ে বড় তারকা নেইমার। সে ধাক্কা কাটিয়ে নতুন উদ্যোমে সমর্থনের জন্য মিনেইরাওতে গ্যালারি উপচে হাজির হয়েছিলেন ব্রাজিল সমর্থকেরা। কিন্তু তারা হয়তো কল্পনাও করতে পারেননি, একটু পরে কী অপেক্ষা করছে তাদের সামনে।
ব্রাজিলের স্বপ্ন গুড়িয়ে সে ম্যাচটা জিতেছিল জার্মানি। শুধু যে স্বপ্ন গুঁড়িয়েছে, এমন নয়। ব্রাজিলকে রীতিমতো পাড়ার দল বানিয়ে বিধ্বস্ত করেছে ৭-১ গোলে। এক ব্রাজিল সমর্থকের কান্নাভেজা ছবি এখনো পাওয়া যায় ইন্টারনেটে। সেদিন তাদের মনের গহীনে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাতে কি প্রলেপ দেওয়া সম্ভব? প্রতি বছর এ দিনটা এলেই দগদগে হয়ে ভেসে ওঠে ভয়াবহ সে স্মৃতি। সাত শব্দটাই একটা ট্রমাতে পরিণত হয় ব্রাজিলের জন্য।
সে ঘটনার আগে লাতিন অঞ্চলের দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্নের নাম ছিল মারাকানাজোকে। ১৯৫০ বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে শুধু ড্র হলেই চলত ব্রাজিলের। এমন উপলক্ষ্যে দুই লাখ দর্শক হাজির হয়েছিলেন মাঠে। উরুগুয়ের বিপক্ষে ২-১ গোলে হেরে যাওয়ার সে স্মৃতি দেশটি বহুদিন ভুলতে পারেনি। ৬৪ বছর পর ঘরের মাঠে আরেকটি বিপর্যয়। সে ঘটনার পর এখন তুলনা চলে মারাকানাজো নাকি মিনেইরাজো- বিপর্যয়ের মাত্রা বেশি কোনটিতে।
ম্যাচের ফল ব্রাজিলকে তো বটেই, বিস্মিত করেছিল জার্মান কোচ ইওয়াখিম ল্যোভকেও। তিনিও বলেছিলেন, ‘আমরাও স্তম্বিত এবং অভিজ্ঞতা ২০০৬ সালের মতোই (২০০৬ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অতিরিক্ত সময়ের শেষ মুহূর্তে ইতালির কাছে দুই গোল খেয়ে হেরেছিল জার্মানি। সেই ম্যাচে ইয়ুর্গেন ক্লিন্সম্যানের সহকারী ছিলেন লো)।’
আর ব্রাজিল কোচ লুইস ফিলিপ স্কলারি ওই দিনটাকে তাঁর জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন বলে উল্লেখ করেছিলেন। ব্রাজিলের ২০০২ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক সেদিন হয়ে যান খলনায়ক। বলেছিলেন, ‘এটা আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন। আমি সম্পূর্ণ দায় নিচ্ছি।’
ম্যাচ শেষে কাঁদতে কাঁদতে জাতির উদ্দেশে ক্ষমা চেয়েছিলেন অধিনায়ক ডেভিড লুইজ। সেদিন দলে না থাকা নেইমার ও সিলভার হতভম্ব অভিব্যক্তি ছাপা হয়েছিল ব্রাজিলের অনেক পত্রিকায়! ব্রাজিলিয়ান সংবাদপত্র ‘ও গ্লোবো’ সেই ম্যাচের খবর প্রথম পাতায় দিয়ে শিরোনাম দিয়েছিল, ‘লজ্জা, গ্লানি এবং অপমান।’ তারা ব্রাজিলের প্রত্যেক খেলোয়াড়কে সেদিন শূন্য রেটিং দিয়েছিল।
সেই হারের যন্ত্রণা খুব কাছ থেকে যিনি উপলব্ধি করেছিলেন, তিনি গোলরক্ষক হুলিও সিজার। তাঁকে ফাঁকি দিয়েই একে একে সাতবার বল জড়িয়েছিল জালে। অনেক পরে এই ম্যাচ নিয়ে তাঁর বলা কথাগুলো যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে ভ্যান গঘের মৃত্যুকালীন সময়ের সেই কথাটিকে। সিজার বলেছিলেন, ‘এখনো যখন আমি শুয়ে থাকি, অনিবার্যভাবে ম্যাচটি নিয়ে চিন্তা করি। আমি কল্পনা করি সেই দিনটির কথা, বহু বছর পর যেদিন সংবাদমাধ্যমে ঘোষণা হবে: “হুলিও সিজার, ৭ গোল খাওয়া গোলরক্ষক মারা গেছেন।”’