লিখেছেন: নুর আহমদ সিদ্দিকী
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামী দলগুলোর ভূমিকা বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ হলেও তাদের মধ্যে পারস্পরিক বিভাজন ঐ প্রভাবকে পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হতে দেয়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যে চিত্রটি উঠছে, তা নিঃসন্দেহে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর নেতৃত্বে কয়েকটি প্রভাবশালী ইসলামী দল একক রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হচ্ছে। এই ঐক্যপ্রচেষ্টা শুধু নির্বাচনী কৌশল নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকেও একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ।
সাম্প্রতিক জাতীয় ওলামা -মাশায়েখ-আইম্মা পরিষদের মতবিনিময় সভায় জামায়াতে ইসলামীর একজন শীর্ষ নেতা যখন বলেন, “ঐক্য গঠনে জামায়াত সবচেয়ে বেশি উদারতার পরিচয় দেবে,” তখন তা নিছক বক্তব্য নয়, বরং ইসলামী রাজনীতির ভেতরে উদারতার একটি ব্যতিক্রমী ঘোষণা। যদি জামায়াত এই উদারতাকে বাস্তব রূপ দেয় এবং ইসলামী আন্দোলনসহ পাঁচ দলের ঐক্যে যুক্ত হয়, তাহলে বর্তমান বিরোধী রাজনীতিতে এটি হবে একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম। শুধু বিএনপির বিকল্প নয়, বরং একটি আদর্শভিত্তিক রাজনীতির সম্ভাব্য পথরেখা।
এই ঐক্যপ্রচেষ্টায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন পীর সাহেব চরমোনাই হাফিজাহুল্লাহ। গেল কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে তিনি যেভাবে দলগুলোকে একত্র করার প্রয়াস চালিয়ে আসছেন, তা একমাত্র একজন রাজনৈতিক অভিভাবকই করতে পারেন। বিশেষ করে ২২ মে গভীর রাতে পাঁচ ইসলামী দলের জরুরি বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে তিনি যে নেতৃত্বের পরিচয় দিয়েছেন, তা অভূতপূর্ব। সরকারের সঙ্গে চলমান আলোচনা থেকে শুরু করে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সব দলকে একসঙ্গে নিয়ে বৈঠকে যাওয়া—এগুলো নিছক কৌশল নয়, বরং রাজনৈতিক সৌজন্য, উদারতা এবং ঐক্যচেতনার একটি স্পষ্ট প্রতীক।
সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ক দৃশ্যটি ছিল গতকাল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সব ইসলামী দলের শীর্ষ নেতাদের সম্মিলিত ছবি। একসময় যারা ভিন্ন মত, ভিন্ন পথ অবলম্বন করতেন, আজ তারা একই গাড়িতে বসে দেশের ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করছেন—এ দৃশ্যই বলে দেয়, রাজনীতিতে সম্ভাবনার দ্বার সবসময় খোলা থাকে যদি নেতৃত্বে থাকে ইতিবাচক মানসিকতা।
এখানে পীর সাহেব চরমোনাই কেবল একজন দলের নেতা নন, বরং ইসলামী দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। ব্যক্তিগতভাবে বৈঠক করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সবাইকে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত শুধু রাজনৈতিক কৌশল নয়, এটি নেতৃত্বের উদারতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
ইসলামী দলগুলোর এই ঐক্যচেষ্টা শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি একটি আদর্শিক প্রত্যাবর্তনের প্রতিচ্ছবিও। খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক হাফিজাহুল্লাহ যেভাবে পীর সাহেব চরমোনাইকে ‘এযুগের হাজী এমদাদ উল্লাহ মোহাজীরে মাক্কী’ বলে অভিহিত করেছেন, তা এই নেতৃত্বের প্রতি আস্থারই প্রকাশ।
অতএব, আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে যদি এই বৃহত্তর ইসলামী ঐক্য বাস্তব রূপ নেয়, তাহলে রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় এটি হতে পারে একটি নির্ণায়ক শক্তি। বর্তমানের এককেন্দ্রিক ও কর্তৃত্ববাদী ধারা প্রতিহত করতে ইসলামী দলগুলোর এই সমন্বিত পদক্ষেপ জাতিকে নতুন আশার আলো দেখাতে পারে।
আমরা আশা করতেই পারি—এই ঐক্যের হাত ধরে ইসলামপ্রিয় জনতার শক্তিকে একটি সুগঠিত ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক রূপ দেওয়া সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।