স্টাফ রিপোর্টারঃ ময়মনসিংহের ত্রিশালে ৬নং ত্রিশাল (সদর) ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছারিতা,একই জায়গায় বছরের পর বছর অবস্থান, প্রকল্প বাস্তবায়ন ছাড়াই বিল উত্তোলনসহ বহু অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ত্রিশাল ইউনিয়ন পরিষদে যোগদান করে প্রায় দশ বছরেরও বেশি সময় এই পরিষদেই কাটান। গত বছর পার্শ্ববর্তী ফুলবাড়িয়া উপজেলার দেওখোলা ইউনিয়নে বদলি করা হলেও ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ার পর পুনরায় একই পরিষদে আসার জন্য তোরজোর শুরু করেন। ত্রিশাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসাইনের অনুপস্থিতিতে ক্ষমতার দাপট ও বিভিন্ন জায়গায় তদবির করে কিছুদিন পূর্বে আবারও একই পরিষদে বদলি হয়ে আসেন। পুনরায় পূর্বের কর্মস্থলে এসে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত একস্থানে থাকার নিয়ম থাকলেও সে নিয়মের তোয়াক্কা না করে একই স্থানে এখনও বেহাল তবিয়তে আছেন। দীর্ঘদিন ধরে একই কর্মস্থানে থেকে ইউনিয়ন পরিষদকে ব্যক্তিগত অফিসের ন্যায় তার ইচ্ছেমতো সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। গত রমজানে তার বিরুদ্ধে হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে ভিজিএফ বিতরণ করা নিয়ে অনেক অনিয়মের অভিযোগ উঠে। হতদরিদ্র পরিবারের লোকজন ভিজিএফের চাল পায়নি অথচ স্থানীয় চাউলের ব্যবসায়ীরা তার মাধ্যমে ভিজিএফের স্লিপ সংগ্রহ করে চাল উঠিয়ে নিজেরা বিক্রি করেছে বলে জানা যায়। তাছাড়াও টিসিবি পণ্যের কার্ড ও পণ্য বিতরণেও নানান অভিযোগ পাওয়া যায়। ওয়ারিশান সনদ,প্রত্যয়ন পত্র, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন করতে গিয়েও সাধারণ জনগণের দিনের পর দিন ভোগান্তির শিকার হতে হয়। গত ঈদুল ফিতরের আগে স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করের (১%) টাকা উত্তোলন নিয়ে তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠে। পূর্বের টিআর ও কাবিখার রাস্তা দেখিয়ে দু'একজন ইউপি সদস্যকে ম্যানেজ করে ঈদের আগে ওয়ান পার্সেন্টের প্রায় পাঁচ (৫) লক্ষ টাকা উঠিয়ে নেন। পরে ২/৩ জন মিলে সে টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেন। ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শিক্ষক তরিকুল ইসলাম (ছদ্মনাম) জানান, উনি ত্রিশালের সাবেক এমপির আশীর্বাদপুষ্ট এবং নানাবাড়ি ত্রিশাল সতেরো পাড়া হওয়ায় ক্ষমতার দাপটে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে একই পরিষদে আছেন। দীর্ঘ সময় একই জায়গায় থাকা এবং বদলি হওয়ার পরও আবার এখানে চলে আসাটা ইউনিয়নবাসীর জন্য সুখকর নয়। তার প্রভাবে সাধারণ জনগণ অনেক হয়রানির শিকার হচ্ছে। তাকে অতিদ্রুত অন্যত্র বদলি করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণও করেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ত্রিশাল ইউনিয়ন পরিষদের একাধিক ইউপি সদস্য বলেন, ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা দীর্ঘদিন একই স্থানে থাকায় সবার সাথে পরিচিত হয়ে গেছেন। যার প্রভাবে তিনি 'ধরাকে সরা' মনে করছেন। সচিব মহোদয় (ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা) পরিষদের সব ম্যানেজ করেন। অফিসের খরচ বলে বিভিন্নভাবে রেজুলেশন খাতায় সই করিয়ে তার ইচ্ছেমতো পরিষদের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। রমজান মাস থাকাবস্থায় ১% আসছে। ওয়ান পারসেন্টের মিটিং করবে শুনেছি কিন্তু মিটিং করেনি। ঈদের পর এবিষয়ে আলোচনা করলে উনি ২/৩ জন মিলে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছেন কিন্তু কোথায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন তা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এভাবে একটা ইউনিয়ন পরিষদ চলতে পারে না। অভিযুক্ত ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামকে মুঠোফোনে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পরে জানাবেন বলে ফোন কেটে দেন। কিন্তু পরে বারবার ফোন দিলেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক(ভারপ্রাপ্ত) লুৎফুন নাহার বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। অভিযোগ পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।