পাকিস্তানের প্রখ্যাত সাংবাদিক হামিদ মিরের সঞ্চালিত একটি টেলিভিশন টক শো বাতিল করা হয়েছে। দেশটির ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর সমালোচনা করার কয়েক দিন পর গত সোমবার তার শো বাতিল করা হয়।
এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার গ্রুপ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিডিয়া সেন্সরিং এবং সাংবাদিক নিপীড়নের অভিযোগ আনেন হামিদ মির।
সমালোচকেরা বলে আসছেন পাকিস্তানে সাংবাদিকদের ওপর হুমকি ক্রমেই বাড়ছে। তবে সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে থাকে। হামিদ মিরের দাবি তার স্ত্রী ও মেয়েকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের সবচেয়ে মিডিয়া গ্রুপের অংশ জিও নিউজে ‘ক্যাপিটল টক’ নামে একটি রাজনৈতিক টক শো সঞ্চালনা করতেন হামিদ মির।
দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক টক শো হিসেবে পরিচিত এই শো। সোমবার তিনি জানান, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ তাকে টক শো সঞ্চালনা থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করে।
জিও নিউজ কোনও কারণ দেখায়নি। তবে নিশ্চিত করেছে যে এই প্রখ্যাত সাংবাদিক কিছুদিন টেলিভিশন সম্প্রচার থেকে বিরত থাকবেন।
জিও নিউজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে যে সেনাবাহিনীর চাপের মুখে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ।
গত সপ্তাহে নিজ বাড়িতে অজ্ঞাত তিন ব্যক্তির হামলার শিকার হন সেনাবাহিনীর আরেক সমালোচক সাংবাদিক আসাদ আলি নুর।
তার দাবি হামলাকারীরা তাকে আঘাত করে আর তার রিপোর্টিং নিয়ে হুমকি দেয়। নিজের টক শোতে ওই ঘটনার সমালোচনা করে হামিদ মির স্বচ্ছতার দাবি তোলেন।
তিনি বলেন, পাকিস্তানে সাংবাদিকদের ওপর একাধিক হামলার জন্য দায়ীদের শনাক্ত করতে পারেন তিনি।
হামিদ মির বলেন, ‘আমাদের আঘাত করতে তোমরা যদি আমাদের বাড়ি ভেঙে ঢুকে পড়ো, ভালো কথা, আমরা তোমাদের বাড়িতে প্রবেশ করতে পারবো না কারণ তোমাদের ট্যাংক আর বন্দুক আছে, কিন্তু আমরা বিষয়গুলো প্রকাশ করে দিতে পারি, তোমাদের বাড়ির ভিতরের বিষয়গুলো।’
হামিদ মিরের অনুষ্ঠান বাতিল করাকে শাস্তিমূলক পদেক্ষপ বলে বর্ণনা করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
সংস্থাটি বলছে, ‘এই ঘটনার মধ্য দিয়ে মিডিয়া আউটলেটের দায়িত্বকে খর্ব করা হয়েছে আর ইতোমধ্যে নিপীড়নের পরিবেশ বজায় রাখা অবস্থায় বাক স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।’
কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টেরে স্টিভেন বাটলার সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন এই ঘটনা পাকিস্তানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সত্যিকার ঘাটতিকে সামনে এনেছে।
পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনও হামিদ মিরের শো বাতিল করার নিন্দা জানিয়েছে। অবিলম্বে তাকে কাজ শুরু করতে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কমিশন।
তবে শো বাতিল হওয়ার পর চাপের মুখে নতি স্বীকারে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন হামিদ মির। এক টুইট বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘অতীতে আমাকে দুইবার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
দুইবার চাকরি হারিয়েছি। হত্যা চেষ্টা থেকে বেঁচে ফিরেছি কিন্তু সংবিধানে প্রদত্ত অধিকারের কথা বলা থামাইনি। আমার কাছে কোনও কিছুই নতুন নয়।’
উল্লেখ্য, দক্ষিণ পশ্চিম বেলুচিস্তান প্রদেশে সেনাবাহিনীর মানবাধিকার হরণ নিয়ে টক শো পরিচালনার পর ২০১৪ সালে এক বন্দুক হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন হামিদ মির। তার হামলাকারীদের পরিচয় কখনওই জানা যায়নি।
আইএ/