চবি প্রতিনিধি: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্বর্গভূমি ২১০০ একরের ক্যাম্পাসে বুকে দাপিয়ে বেড়ানো অন্যতম সংগঠন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) রাঙ্গুনিয়া স্টুডেন্টস ফোরাম। ১৯৯১ সালের ৩রা ডিসেম্বর থেকে এই পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ, সৃজনশীল মুক্তবুদ্ধি চর্চার,অরাজনৈতিক ফ্ল্যাটফর্ম হিসেবে গৌরব ও ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করে চলছে এই সংগঠনটি।
শুরুর দিকে সংগঠনটি কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও মেলবন্ধনের উদ্দেশ্য নিয়ে চললেও বর্তমানে তা বহুমাত্রিক সৃজনধর্মী কর্মকান্ডের মাধ্যমে অগ্রসর হচ্ছে। সংগঠনটির ঐতিহ্যবাহী কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতায় বর্তমান ইকবাল—শিহাব পরিষদ দায়িত্ব গ্রহনের পর প্রাণসঞ্চার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত গত একবছর যাবত পুরো বিশ্বে চলমান করোনা মহামারী পরিস্থিতিতেও সংগঠনটি তাদের কার্যক্রম অনলাইন ও অফলাইন উভয় মাধ্যমে সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছে।
করোনার স্থবির অবস্থাকে পাশ কাটিয়ে বিভিন্ন সময়ে সচেতনতামূলক, সামাজিক, আর্তমানবতার সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এছাড়া ভার্চুয়াল মাধ্যমেও অত্যধিক সরব থেকে 'রাঙ্গুনিয়ার কৃতিজন পরিচিতি অনুষ্ঠান ' সমসাময়িক বিষয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের নিয়ে নিয়মিত ওয়েবিনারসহ ভিন্নধর্মী আয়োজনে প্রশংসা কুড়িয়েছে।
করোনাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু রাঙ্গুনিয়াস্থ ও এর আশেপাশের আগ্রহী শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষায় প্রয়োজনীয় নির্দেশানসহ সহায়তা দিতে প্রথমবারের মত ভার্চুয়াল ফ্রী বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং এর ব্যবস্থা করা হয় সংগঠনের উদ্যোগে যা সর্বমহলে অভিনন্দিত হয়। পরিবেশ উন্নয়ন বিশেষত রাঙ্গুনিয়ার প্রাকৃতিক ভারসাম্য সুরক্ষায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রাঙ্গুনিয়া স্টুডেন্টস ফোরাম রেখে চলছে অনবদ্য অবদান।
সাম্প্রতিক ইছামতী নদীসহ উপজেলার অপরাপর জলাশয়সহ সকল প্রাকৃতিক উপাদানসমূহের দূষণ, ভরাট ও দখলের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে।
বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রাঙ্গুনিয়া স্টুডেন্টস ফোরামের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ড. হাছান মাহমুদ এমপি সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করে বহুমুখী কার্যক্রম সম্প্রসারণসহ নানা বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শও দেন। সংগঠনটি সম্পর্কে তার অভিমতে তিনি বলেন, আমি যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম আমাদের সময় পড়ালেখার পাশাপাশি সৃজনশীল মুক্তবুদ্ধি চর্চা করতে হত সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে কারণ সেই সময় তেমন কোনো ফ্লাটফর্ম ছিল না এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও তুলনামূলক কম ছিল। সময়ের পরিক্রমায় বর্তমানে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা যেমন বেড়েছে ঠিক তেমনি বিভিন্ন সংগঠনেরও আত্মপ্রকাশ গঠেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রাঙ্গুনিয়া স্টুডেন্টস ফোরাম বর্তমান সময়ে এসে যেভাবে তাদের বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। পড়ালেখার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এধরণের সেবামূলক ও সচেতনতামূলক কর্মপ্রয়াস তাদের ব্যক্তিজীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং আত্ম বলীয়ান হয়ে গড়ে উঠতে সহায়তা করবে।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক মোঃ গিয়াস উদ্দিন শাহজাহান বলেন, এই সংগঠন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শিক্ষার্থীদের প্রাণের মেলবন্ধনের ঐক্যবদ্ধ এক প্লাটফর্ম যেখানে এসে শিক্ষার্থীরা তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন, মতামত প্রকাশ ও একে অপরকে বিভিন্নরকম সহায়তা আদান—প্রদান করতে পারে।
সংগঠনটির প্রারম্ভিক অভিযাত্রার অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রাঙ্গুনিয়া স্টুডেন্টস ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সহ—সভাপতি, রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় সর্বপ্রথম বেসরকারি পর্যায়ে চালু হওয়া আব্দুল কাদের স্মৃতি মেধাবৃত্তির প্রবক্তা ও সরকারি প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ঈমাম হাছান বলেন, শুরুর দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবল নিজ বিভাগের সহপাঠীদের সাথে পরিচয় ছিল। পরবর্তীতে এই সংগঠন গড়ার মাধ্যমে নিজ এলাকার সহপাঠীদের পাশাপাশি সিনিয়র—জুনিয়র সকলের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। সাথে বার্ষিক বনভোজন, পুণর্মিলনী আয়োজনসহ নিজ নিজ এলাকায় শিক্ষার্থীদের পরামর্শ ও উৎসাহিত করারও উদ্যোগ নেওয়া হত সেই সময়।
বর্তমান কার্যকালের দায়িত্ব পালন সম্পর্কে সংগঠনের সভাপতি ইকবাল হোসেন বলেন, আঞ্চলিকতার উর্ধ্বে উঠে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রাঙ্গুনিয়া স্টুডেন্টস ফোরাম নানামুখী , সময়োপযোগী ও সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে বর্তমানে প্রতিষ্ঠার গৌরবময় তিনদশক অতিবাহিত করছে। বিশ্ব শিশু দিবসে সুবিধাবঞ্চিত অসহায় শিশুদের নিয়ে বিশেষ আয়োজন, বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে শোভাবর্ধনকারী গাছের চারা রোপণ কর্মসূচী পালন, শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, করোনা মহামারী সচেতনতায় ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ, অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহে সার্বিক সহায়তা প্রদান, ঈদ উপহার বিতরণসহ করোনায় কর্মহীন মানুষের মাঝে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ও উপহার বিতরণের মত বহুমুখী কার্যক্রম সংগঠনের গৌরবময় ইতিহাসকে সমুজ্জ্বল ও বহুক্ষেত্রে বৃদ্ধি করছে।
সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা সম্পর্কে সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুর রহমান শিহাব বলেন, সম্পূর্ণ অলাভজনক হওয়ায় এই সংগঠনের নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনায় অনেক সময় আর্থিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। তবে আমাদের সকল সদস্যের প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও আন্তরিকতার কারণে এবং সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় আমরা এ যাবতকালীন সকল আয়োজনে সফল হতে পেরেছি। বিশেষত দেশে—প্রবাসে বিভিন্ন বিশিষ্টজনেরা নিয়মিত পরামর্শ ও উৎসাহ প্রদান করে আমাদের প্রাণিত করছে। আঞ্চলিক সংগঠন হিসেবে নির্দিষ্ঠ গন্ডি ও গতানুগতিক কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আমরা চেষ্টা করছি নিজ নিজ অবস্থান থেকে সময়োপযোগী, ভিন্নধর্মী ও সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনা করতে। পাশাপাশি অদম্য ইচ্ছাশক্তি, সুদৃড় মনোবল ও দায়িত্বজ্ঞান সম্পর্কে একাগ্রতা থাকলে যেকোনো প্রতিকূলতা কাটিয়ে কাঙ্খিত লক্ষ্যে অগ্রসর হওয়ার বার্তা সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বর্তমানে অনলাইন ও অফলাইন উভয় মাধ্যমে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে ও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বিভিন্ন সময়োপযোগী কার্যক্রম আয়োজনের মাধ্যমে নানাভাবে অবদান রেখে যাচ্ছে যার ফলশ্রম্নতিতে করোনা মহামারীর দুঃসময়েও একের পর এক কর্মপ্রয়াস চলমান রয়েছে ।
নাজমুল/