আতিকুল ইসলাম, জবি: প্রবাদ আছে, "যে নারী রাঁধে, সে চুলও বাঁধে।" নারীরা এখন আর ঘরের কাজে সীমাবদ্ধ নয়। এরই মাঝে আমরা শুনেছি হাজারো নারীর সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প। তেমনই এক নারী থেকে নারী উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প গড়লেন পেরী। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের(জবি) ছাত্রী তামান্না ইসলাম পেরী। তার সফলতার গল্প শুনুন তার মুখেই-
আম্মু রান্নার বিষয়ে ভীষণ সৌখিন। প্রতিদিনের ডাল ভাত খেলেও প্রশংসা না করে পারতাম না। আম্মুর রান্না আমরা তো পছন্দ করতামই, আত্নীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব সবার কাছ থেকেই প্রশংসা পেত। সব সময় ইচ্ছা ছিলো যদি কখনো সুযোগ হয় আম্মুকে একটা রেস্তোরা খুলে দিবো। কিন্তু এটা বললেই তো আর হয়ে যায় না।
লকডাউনে বাসায় ছিলাম। বাহিরের খাবারগুলো খুব মিস করছিলাম কিন্তু সব তো বন্ধ। যা ইচ্ছা হত বাসায় বানিয়ে খেতাম। একদিন হঠাৎ মাথায় আসলো আচ্ছা রেস্তোরা না হউক একটা অনলাইন শপ তো আম্মুকে খুলে দিতেই পারি। যেই ভাবা সেই কাজ। ২/৩মাস সময় নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করলাম কিভাবে কি করা যায়। এর পর শুরু হলো অনলাইন ভিত্তিক শপ Fromkitchen এর যাত্রা।
আমরা মূলত বাংলা খাবার নিয়ে কাজ করছি। আর খাবারগুলোর বেশিরভাগই ময়মনসিংহের কিছু নাম করা আইটেম। যেমন-চ্যাপার শুটকি, পুলি, মাংসের শুটকি, ডালের বড়ি, ভর্তা ইত্যাদি। খাবারগুলো খুবই সাধারণ। তবে আমি এই আইটেমগুলো খেতে চেয়েও বাংলা রেস্তোরায়গুলোতে পাইনি। এর মূল কারণ এগুলো বেশ ঝামেলা তৈরী করা। এমনকি বাসা বাড়িতেও এই ঝামেলার কারণে অনেকের পছন্দ থাকলেও তৈরী করে খাওয়া হয় না। তাই এই দেশীয় খাবারগুলোর ঐতিহ্য ধরে রাখতেই আমি এই বিশেষ আইটেমগুলোকে বেছে নিয়েছি।
শুরুতে আমার মূলধন ছিলো মাত্র ১০০০ টাকা।
এই বিজনেসটা শুরু করতে গিয়ে আশপাশে অনেকের ন্যাগেটিভিটি নিতে হয়েছে। সব চেয়ে বেশি যেটা শুনেছি "আরে এগুলো কে খাবে! এইগুলো তো বাসাতেই রান্না করা হয়!" এছাড়াও পড়াশুনা করে শেষমেষ খাবার বিক্রি করছি? আগে ফ্রি খাওয়াতে হবে, লস হবে, এসব চলবে না। আরো কত কি!
এছাড়াও অনলাইন ব্যবসা নিয়ে অনেক কিছুই অজানা ছিলো তাই অনেক প্রবলেমও ফেইস করেছি। তবে অনলাইন ব্যবসায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ টিকে থাকা, লেগে থাকা। এইটুকুন করলেই ভালো কিছু করা সম্ভব।
খাবার নিয়ে কাজ করতে গেলে একটা জিনিস মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হয় যে আমিই সেরা।
কারণ সবার রুচি পছন্দ এক না। আর এটা খাবারের ব্যাপারে আরো বেশি কাজ করে। তাই সবার রিভিউ নিয়ে খাবারের মানের স্বাদের এমন একটা স্যান্ডার্ড দাড় করাতে হয় যেটা অধিকাংশের টেস্টের সাথে মিলে।
আমরা একটা ফোকাস নিয়ে আগাচ্ছি। সেটা হচ্ছে আমরা এমন কিছু আইটেম দিচ্ছি যেগুলো আধুনিক খাবার আর শহুরে ব্যস্ততার কারণে মানুষ ভুলতে বসেছে। তাই নিজ এলাকার প্রচলিত খাবারের সাথে অন্যদেরকে পরিচয় করিয়ে দেয়া আর যারা সময়ের অভাবে পারছে না তাদের কাছে আইটেমগুলো পৌছে দেয়াই মূলত আমাদের লক্ষ্য। হয়তো একটা সময় আসবে রান্না করা মাংসের শুটকি আর চ্যাপাভুনা বা পুলির জন্য মানুষ এক নামে Fromkitchen কে চিনবে।
আমার এই বিজনেজ থেকে আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি যদি বলি সেটা হচ্ছে আমার আর আম্মুর রান্নাটা সবার কাছে পৌছে দেয়া। আর এরপর যখন পসেটিভ রিভিউ পেয়ে আম্মুকে জানাই তখন তার মুখের হাসিটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
আমাদের মা বোনেরা তো প্রতিদিনই রান্না করেন, স্বীকৃতি কয়জন পায়? যখন কেউ তার রান্নার প্রশংসা পায় তখন আরো ভালো করার জন্য এটা মোটিভেশন হিসেবে কাজ করে। হউক সেটা প্রতিদিনের খাবার।
এরপর আরেকটা জিনিস সেটা হলো আমার কাস্টমারস। হোমমেইড ফুড যারা নেয় তাদের অধিকাংশই অর্ডার করেন কাছের মানুষেদের জন্য। তখন একেকটা নতুন গল্প শুনি। বাস্তব গল্প। এই জিনিসটা ভীষন দারুণ।
কেউ যদি এরকম বিশেষ আইটেমগুলোকে নিয়ে কাজ করে তবে এটি অবশ্যই প্রশংসনীয়। আর ঐ যে বললাম একেকজনের রুচি একেকরকম। একই আইটেম কিন্তু হাত বদলের কারণে স্বাদ ভিন্ন হয়ে যায়। কোয়ালিটি আর টেস্ট এর উপর কোনো কম্প্রোমাইজ না হলেই হলো।
সবশেষে একটা কথা, আমিই সেরা এই চিন্তাটা ঝেড়েই তবেই এ বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে। কারণ একেক এলাকার টেস্টবাড একেক রকম। যেটাকে আমি হয়তো দারুণ বলছি কিন্তু আমার কাস্টমার হয়তো গন্ধই সহ্য করতে পারছে না। তাই নিজের দিক থেকে না ভোক্তার দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবতে হবে। তাহলে ভালো একটা ফলাফল বের করে নিয়ে আসা সম্ভব।
নাজমুল/